দীর্ঘ সাত মাসের অপেক্ষার পালা ফুরাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। হাথুরুসিংহের শূন্যস্থান পূরণ করতে টাইগারদের কোচ হয়ে আসছেন আরেক ‘বিদেশি’ ইংলিশ স্টিভ রোডস। বৃহস্পতিবারই ঘোষিত হয়েছে এ ইংলিশ কোচের নাম।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ১১তম বিদেশি কোচ হতে যাচ্ছেন রোডস। রিচার্ড পাইবাসের পর টাইগারদের দ্বিতীয় ইংলিশ কোচ। ১৯৯৬ সালে গর্ডন গ্রিনিজ যে চারাবৃক্ষকে বড় করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই বৃক্ষ এখন বিরাট মহীরুহ। সেই বটবৃক্ষ রোডসের হাতে আরও কতটা ডাল-পালা ছড়ায় সেটাই জানা যাবে ভবিষ্যতে।
টাইগার ক্রিকেটের আগের ১০ কোচ ২২ বছরে কতটা কী করতে পেরেছেন, আপাতত সেটা জেনে নেয়া যাক এখন-
গর্ডন গ্রিনিজ (ডিসেম্বর ১৯৯৬- মে ১৯৯৯)
১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে খেলানোর দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন। এসে সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়ে যান কয়েকধাপ। তার হাত ধরে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখায় বাংলাদেশ। উন্মুক্ত হয় টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পথ। কিন্তু তখনই চাকরি হারান গ্রিনিজ।
এডি বারলো (আগস্ট ১৯৯৯- মে ২০০০)
ডিরেক্টর অব কোচিং- পদ নিয়ে আসলেও বারলোর দায়িত্ব ছিল হাঁটিহাঁটি পায়ে চলা বাংলাদেশ টেস্ট দলকে ক্রিকেটে শক্ত ভিত এনে দেয়া। জবাবে ঘরোয়া ক্রিকেটকে দারুণভাবে সাজাতে চাইলেন এ সাউথ আফ্রিকান। কিন্তু ভাগ্যই বারলোকে দায়িত্বে থাকতে দিল না বেশিদিন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেন বারলো। শেষপর্যন্ত চোখে অশ্রু নিয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। ২০০৫ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আগপর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন বারলো।
ট্রেভর চ্যাপেল (মার্চ ২০০১- ফেব্রুয়ারি ২০০২)
অনেক আশা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত চ্যাপেল ভাতৃত্রয়ীর ছোটজনকে কোচ বানিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ১৯ ম্যাচের ১৮টিতেই হারার পর ১১ মাসের মাথায় ট্রেভরকে রাখার যুক্তি খুঁজে পায়নি বিসিবি।
মহসিন কামাল (এপ্রিল ২০০২- মার্চ ২০০৩)
এই পাকিস্তানি ১১ মাস বাংলাদেশের কোচ হয়ে থেকে ২৩ ম্যাচে জেতাতে পারেননি একটি ম্যাচও। তার আমলেই কানাডার কাছে ২০০৩ বিশ্বকাপে হতাশার হার দেখেছিল বাংলাদেশ। ফলাফল চাকরীচ্যুত মহসিন কামাল।
ডেভ হোয়াটমোর (মে ২০০৩- জুন ২০০৭)
বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা কোচ। শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত এ কোচের আমলেই ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় লাল-সবুজরা। হোয়াটমোরের চার বছরের দায়িত্বে ১১৮ ম্যাচের ৩৫টি জিতেছে টাইগাররা।
জেমি সিডন্স (নভেম্বর ২০০৭- এপ্রিল ২০১১)
অস্ট্রেলিয়ান এ ভদ্রলোকের হাত ধরে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানদের তারকা হয়ে ওঠা। চার বছরের দায়িত্বে সিডন্স বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দিয়েছেন অনেককিছুই। অবশ্য এরপরও ২০১১ সালে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়া পর তার সঙ্গে চুক্তি বাড়ায়নি বিসিবি।
স্টুয়ার্ট ল (জুলাই ২০১১- মে ২০১২)
মাত্র ১১ মাস দায়িত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান স্টুয়ার্ট ল। তার হাত ধরেই প্রথমবারের মতো ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। সেই আসরের পরই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কোচের পদ ছাড়েন ল।
রিচার্ড পাইবাস (জুন ২০১২- অক্টোবর ২০১২)
পাইবাসের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টিকে ছিল মাত্র চার মাস। স্বল্পসময়েই বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পদ ছাড়েন এ ইংলিশ কোচ।
শেন জার্গেনসেন (নভেম্বর ২০১২- এপ্রিল ২০১৪)
পাইবাস আমলে ছিলেন বোলিং কোচ। পরে তার হাতেই বর্তায় হেড কোচের দায়িত্ব। দায়িত্বে ছিলেন দেড় বছর। ২০১৪ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর জার্গেনসেনকে বিদায় দেয় বিসিবি।
চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে (জুন ২০১৪- নভেম্বর ২০১৭)
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া সবচেয়ে সেরা কোচের নাম হাথুরুসিংহে। তার কোচিংয়েই প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ও ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ, হাথুরুর সময়েই। পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। পায় ভারত ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদও। কিন্তু সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্কও যেন হাত ধরে চলেছে হাথুরুর আমলে। নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়ে আচমকাই কোচের পদ ছাড়ার আগে বাংলাদেশের হয়ে অবশ্য সাফল্যের পাল্লাটাই ভারী ছিল তার।
স্টিভ রোডস ( জুন ২০১৮- বর্তমান)
হাথুরুসিংহের উত্তরসূরি রোডসের প্রধান কাজ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। ২০১৯ বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। যে কারণে টাইগারদের হেড কোচ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন এ ইংলিশম্যান। চুক্তি আপাতত দুই বছরের। ইংল্যান্ডের হয়ে ১১টি টেস্ট ও ৯টি ওয়ানডে খেলা রোডসের দায়িত্ব হবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে দারুণ কিছু সাফল্য এনে দেয়া।
ক্রিকইনফো অবলম্বনে