বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের উত্তম সময় বিরাজ করছে উল্লেখ করে থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগমন্ত্রী ড. কুবসেক পুত্রাকুল বলেছেন, থাইল্যান্ডের ব্যবসায়িরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে সড়ক খাতে থাই ব্যবসায়িরা বিনিয়োগ করতে চায় বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড বিজনেস ডায়ালগ’ এসব কথা জানান থাইল্যান্ডের বিনিয়োগমন্ত্রী কুবসেক পুত্রাকুল।
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ছিলেন থাইল্যান্ডের বিনিয়োগমন্ত্রী ও বিনিয়োগ বোর্ডের মহাসচিবসহ ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
এর আগে গতকাল প্রতিনিধি দলটি সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠক করেছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ‘ইয়াং টাইগার’ উল্লেখ করে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দল। তারা বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি সড়ক ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বাড়াতে বন্দর ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের আগ্রহ রয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে এক বিফ্রিংয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দলটি মনে করে, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে বর্তমানে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই থাইল্যান্ডের বিনিয়োগমন্ত্রী সেদেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
মুক্ত আলোচনায় থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিনিয়োগমন্ত্রী ড. কুবসেক পুত্রাকুল জানান, থাইল্যান্ড বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিশেষত বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল করিডোরে যুক্ত হতে চায় তারা। সড়কপথে যোগাযোগ গড়ে তুলতে দেশটি বিনিয়োগ করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা ‘ওয়ান বাই ওয়ান’ অবকাঠামোকে প্রধান্য দেবে।
এছাড়া দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বন্দরের উন্নয়নেও বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে দুই দেশের আমদানি-রফতানির চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ ডলারের পণ্য। বিপরীতে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৭৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য। এক্ষেত্রে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে এ বাণিজ্য ঘাটতিকে আমি খুব উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করি না। থাইল্যান্ড যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। একইভাবে উন্নত প্রযুক্তিসহ বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। দুই দেশই আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ডে বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। তবে পাট, পোশাক ও চামড়া জাতীয় পণ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য যে প্রধান পণ্য রয়েছে সেগুলো এই সুবিধা পাচ্ছে না। সেগুলোর ব্যাপারে তাদের অনুরোধ করেছি।
‘এছাড়া তাদের বন্দর এবং আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করার অনুরোধ করেছি। তারাও এই দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে চায়।’
থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্যের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠিত হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে এফবিসিসিআই এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি মিংপ্যান্ট ছায়া, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিমসহ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও এফবিসিসিআই নেতারা।