বাংলাদেশে আত্মঘাতী হামলার মতো ঘটনা রুখতে হলে এখনই ব্যাপকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নূরুল হুদা।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষ হতে না হতেই শুক্রবার ঢাকার আশকোনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটলো। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে এরকম আত্মঘাতী হামলা দেশে এই প্রথম।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে সীতাকুণ্ডে টানা ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নারীসহ নিহত হয় চার জঙ্গি ও এক শিশু। সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক নারীসহ দুই জঙ্গির হাত-পা ও মাথা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এসব ঘটনার পর নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে দেশজুড়ে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নূরুল হুদা।
শুক্রবার চ্যানেল আই অনলাইনকে মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন: বিস্ফোরক ভেস্ট গায়ে নিয়ে এর আগেও বাংলাদেশে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে সেগুলোর কোনোটিই হামলার আকারে হয়নি, তাই সেগুলো ঢাকার আশকোনার ঘটনার মতো নয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা করা-এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ধরনের হামলা আগে সেভাবে ঘটেনি।
এধরণের জঙ্গি হামলা রুখতে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, এইসব আত্মঘাতী জঙ্গিদের রুখতে হলে এখনই ব্যাপকভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।সমাজের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামগ্রিকভাবে জঙ্গি নির্মূল কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে আত্মঘাতী জঙ্গিদের একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হবে না। সবাই মিলে জঙ্গি তৈরির সমাজ কাঠামোকে ধ্বংস করে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন: আত্মঘাতী জঙ্গিদের ঠেকাতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। মেধাবী অফিসারদের সমন্বয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সচল রাখতে হবে। এই জঙ্গিদের লক্ষ্য বাংলাদেশে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা। তারা এদেশের সরকার, আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের প্রতি আস্থা রাখে না।তাই যেকোনো মূল্যে তারা রাষ্ট্র যন্ত্রের উপরে হুমকি ছুড়ে দিচ্ছে, আক্রমণ করছে। সাধারণ মানুষকে তাদের দলে পেতে চেষ্টা করছে।এদেরকে রুখতে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকার এ বিষয়ে সচেতন আছে এবং জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকা প্রসংশনীয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন: সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সফল জঙ্গি বিরোধী অভিযান সম্পন্ন করেছে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব তৎপরতা সরকারের সচেতনতাকে নির্দেশ করে।স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের যোগাযোগ আছে কি নেই, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা কতোটুকু সফল হলো সে বিষয়টি।ইতোমধ্যে তারা কয়েকটি হামলা করেছে বা করার চেষ্টা করেছে যা অশুভ ইঙ্গিত বহন করে।