বায়ুদূষণে এবছর সব থেকে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দূষণের মাত্রাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরসঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে, দিওয়ালি উৎসবের কারণে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। তাতে শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম টি-টুয়েন্টি। ৩ নভেম্বর দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি।
বিশ্বব্যাপী শহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা ‘এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্সের (একিউআই)’ মান অনুযায়ী, ০-৫০ ভালো বলে বিবেচিত হয়, ৫১-১০০ সন্তোষজনক, ১০১-২০০ মাঝারি, ২০১-৩০০ খারাপ এবং ৩০১-৪০০ খুবই খারাপ অবস্থা। ৪০০’র উপরে যেকোনো অবস্থাকে গুরুতর হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
একিউআই এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত শুক্রবার নয়াদিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা ৩৮৮ ছুঁয়েছে। যেখানে এর নিরাপদ মাত্রা হচ্ছে ৬০। এরকম দূষণের মধ্যে একটানা বাস করতে থাকলে ফুসফুসের নানা রোগসহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন যেকেউ।
ভারত সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাতাসের গতি কমে যাওয়াতেই দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফলে ঘন হয়ে কুয়াশার মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে দিল্লির বাতাসে। সামনে দিওয়ালিতে অবস্থার আরও অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) এক কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেছেন। দূষণ থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের রক্ষা করতে ওই সময়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকদের আবর্জনা না পোড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য সচিব সি কে মিশ্রা।
দিল্লির বায়ুদূষণ ক্রিকেটারদের ওপর কোনো প্রভাব রাখবে না উল্লেখ করে বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দীপাবলির এক সপ্তাহ পরে এই ম্যাচ। তাই ধরে নেয়া যেতে পারে ম্যাচে খেলোয়াড়দের ওপর বায়ুদূষণ কোনো প্রভাব তৈরি করবে না। আমরা জানি দীপাবলি উৎসবের পর দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা এমনিতেই বেড়ে যায়। তবে এটাও ঠিক, দীপাবলি–সংক্রান্ত কোনো কিছুই আমাদের হাতে নেই।’
২০১৭তে ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্ট ম্যাচের খেলা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই লঙ্কান খেলোয়াড়েরা মুখ ঢাকেন ‘মাস্কে’। দিল্লির বায়ুদূষণ সেদিন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের কাছে। লঙ্কান ক্রিকেটারদের মুখে ‘মাস্ক’ চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল বিসিসিআইকে।
সেই কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ-ভারত টি-টুয়েন্টিটি দিল্লির পরিবর্তে অন্যকোনো শহরে আয়োজন করা যেত কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিসিআইয়ের ওই কর্মকর্তাকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দল উত্তরে দিল্লি দিয়ে সফর শুরু করবে আর পূর্বের কলকাতায় টেস্ট খেলে দেশে ফিরে যাবে। সফরের সূচি সেভাবেই করা হয়েছে। বাংলাদেশ উত্তর থেকে শুরু করে পশ্চিমে যাবে (নাগপুর, রাজকোট, ইন্দোর) এরপর যাবে পূর্বে (কলকাতা)। মনে হয় না বায়ুদূষণ কোনো সমস্যা তৈরি করবে। বাংলাদেশ সফরের সময় পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা যেন জমির আগাছা না পোড়ান, সে ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে রাজ্য সরকার।’
খুব বেশি দরকার হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মুখে ‘মাস্ক’ ব্যবহারের কথা জানাবে বিসিসিআই।
দূষণ পরিস্থিতির কারণে দিওয়ালিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কর্তৃপক্ষও বিকল্প হিসেবে লেজার লাইট ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
৩ নভেম্বর থেকে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারতের টি-টুয়েন্টি সিরিজ। ৭ ও ১০ নভেম্বর বাকি দুই ম্যাচ। পরে ১৪ নভেম্বর ইন্দোরে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ২২ নভেম্বর কলকাতায় শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।