বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত চার ভারতীয়। হেড কোচ, সহকারী কোচ, ফিজিও এমনকি ট্রেনারও ভারতীয় নারী। তারা যুক্ত হতেই সাফল্যের নতুন দিগন্তে হাঁটতে শুরু করেছে টিম টাইগ্রেস। ভারতের হয়ে খেলে, কোচিং করিয়ে তারা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার পুরোটাই নিংড়ে দিচ্ছেন সালমা-রুমানাদের পেছনে।
নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিতব্য টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে শুরু হয়েছে অনুশীলন ক্যাম্প। আর সেখানেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের নব জাগরণ, সম্ভাবনা ও বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে কথা বললেন সহকারী কোচ দেবিকা পালশিকর। সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ও কোচ মনে করেন বাংলাদেশের মেয়েরা অচিরেই সুযোগ পাবেন বিদেশি লিগে খেলার।
ভারতীয় মেয়েরা বিগ ব্যাশ ও ইংল্যান্ডের লিগে খেলছে। বাংলাদেশের মেয়েদের পক্ষে সম্ভব কী না?
দেবিকা: অবশ্যই সম্ভব। যতটুকু জানি, রুমানা ও খাদিজা বিগ ব্যাশে গিয়েছিল। যদিও তারা ম্যাচ পায়নি। তবে সামনে তাদের সুযোগ আসবে, নিশ্চিত করেই এটি বলতে পারি। এশিয়া কাপে সবাই তাদের খেলা দেখেছে। এখন ফ্র্যাঞ্চাইজির চোখ থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উপর। আমি তো মনে করি রুমানা, জাহানারা আরও কয়েকজনের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে বিদেশি লিগে খেলার। আমি বিশ্বাস করি সুযোগ অচিরেই আসবে।’
বাংলাদেশ ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এখন যেখানেই খেলছে সাফল্য পাচ্ছে। অল্প সময়ের কোচিংয়ে কীভাবে সম্ভব হলো?
দেবিকা: জানতাম, এই দলের ভালো করার সামর্থ্য আছে। দলের মাঝে আত্মবিশ্বাসের কিছুটা অভাব ছিল হয়তো। তাদের নিজ নিজ রোল ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার ছিল। তাদের কোনো আইডিয়া ছিল না এইসব বিষয়ে। যে কেউই যে কোনো পজিশনে ব্যাট করতে যাচ্ছিলো। আমরা ব্যাটিং অর্ডারটা ঠিক করেছি। আপনি যদি ব্যাটিং অর্ডারটা দেখেন, দেখবেন আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি। এখন সবাই জানে তাদের কোথায় খেলতে হবে, কী তাদের দায়িত্ব। এখন তারা মাঠে যাচ্ছে আর তাদের দায়িত্বটা পালন করছে।
মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে বিশেষ কী করতে হয়েছে?
দেবিকা: অন্য কোচেরা হয়তো তারা যা চাইতো তাই মেয়েদের দিয়ে করাতো। আমরা তাদের দেখছি, বুঝেছি। আমরা চেয়েছি তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলুক। যা তাদের জন্য সহজ। ওরা জানে, এইটুকু কাজ করা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে, তারা সেটাই করছে। আমরা সেই পথেই তাদের অগ্রসর হতে দিচ্ছি। আমরা একজন মেয়েদের কাছ থেকে প্রতি ম্যাচেই ফিফটি প্রত্যাশা করি না। আমাদের কোনো প্রত্যাশা নেই। তোমার সামর্থ্য এইটুকু, যাও এটাই করে দেখাও। ভয়ডর ভুলে সেটাই করছে তারা। আমি তাদের সাউথ আফ্রিকায় দেখেছি, সেখান থেকে এশিয়া কাপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি অন্য কোচিং স্টাফের সাথেও ছিলাম, এখন এই কোচের সাথে আছি। আমি পার্থক্যটা দেখতে পেরেছি। সে (হেড কোচ অঞ্জু জৈন) মেয়েদের যা বলছে, সেটাই অনেক পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।
‘পাওয়ার হিটিং’ নিয়ে আমাদের যে সমস্যাটা ছিল সেটি কেটেছে কী না? আর কোন কোন জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন?
দেবিকা: এই মুহূর্তে মেয়েরা সব কিছুই ভালো করছে। আমরা ১৪০ এর উপরে রান করেছি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে। ১৪০ এর বেশি স্কোর তাড়া করে এশিয়া কাপে জয় পেয়েছি। আমরা ছোট লক্ষ্যও ডিফেন্ড করে জিতেছি। সব মিলিয়ে ওরা ভালোই করছে। ফিল্ডিং উন্নতি করার জায়গা আছে। মাঝে মাঝে আমরা ক্যাচ ফেলছি, সেটা খেলায় হতেই পারে। আমরা ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কাজ করছি। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে এই ফিল্ডিংটাই সবচেয়ে বেশি পার্থক্য গড়ে দেয়। সুতরাং ফিল্ডিংটা নিয়ে আমরা অনেক বেশি কাজ করতে চাইছি। আপনি যদি শেষ কয়েকটি টুর্নামেন্ট দেখেন, প্রতি ম্যাচেই দেখবেন দুই একটি করে ছয় এসেছে। এখানে দুই-তিন জন ব্যাটার আছে যাদের সেই সামর্থ্য আছে। তারা হয়তো আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছিল। আমি জানি না আগের কোচ তাদের কী দিয়েছে, এখন প্রধান কোচ তাদের স্বাধীনতা দিয়েছে এবং তারা ভালো করছে। প্রতি ম্যাচেই আমরা দুই-তিনটা করে ছয় পাচ্ছি, যেটা ভালো দিক। আমরা এই বিষয়ে ফোকাস করছি। আমরা যদি ম্যাচে ছয়-সাতটা করে ছয় পাই তাহলে দারুণ হবে। কিন্তু আমি মনে করি না যে তাদের পাওয়ার হিটিংয়ে দুর্বলতা আছে। মানসিকতাটাই আসল।
সালমা খাতুন কেন লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করছেন। তিনি তো আগে টপঅর্ডারে ব্যাট করতেন?
দেবিকা: দলে প্রত্যেকেরই একটা দায়িত্ব থাকে। আমাদের জন্য সে অধিনায়ক হিসেবে দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে এখন ভালো বোলার। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেননি সে কেন ওপেন করছে না, সে ওপেন করার ক্ষেত্রেও ভালো। তবে এই মুহূর্তে অন্যরাও দলের জন্য অবদান রাখছে, ভালো করছে। যদি তারা ভালো করে তাহলে সেটাই করতে দেয়া উচিত। সবারই কিছু না কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যে এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য আমরা তাকে সেখানেই সুযোগ দিচ্ছি।
বিশ্বকাপে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ডের মতো কঠিন দলের সঙ্গে খেলতে হবে। কতটা চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
দেবিকা: সত্যি কথা বলতে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমি বলতে পারি বাংলাদেশ দল এখন প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করে না। আমাদের মূল পরিকল্পনা থাকে আমরা নিজেরা কীভাবে ভালো পারফর্ম করতে পারি। আমরা সেই ধারাটাই বজায় রাখতে চাই। আমাদের প্রতিপক্ষ কে, এইসব নিয়ে চিন্তা করতে চাই না। যদি আমরা ভালো করি, আমরা চাইব সেই ধারা বজায় রাখতে।
বিশ্বকাপে কী আশা করছেন?
দেবিকা: আমরা বড় কিছু করার চেষ্টাই করবো। আমরা এই জন্যই আছি। আমরা চাইব এই দল টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করুক। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখন শর্ট টার্ম চিন্তা করছি। আমাদের এখনকার লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন বিশ্বকাপ। এরপর হয়তো আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েও চিন্তা করতে পারবো।
এখন কীভাবে কাজ চলছে?
দেবিকা: আমরা এখন মেয়েদের ফিল্ডিং ও ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। ১৫ দিনের জন্য আমরা ফিটনেস ও ফিল্ডিং নিয়ে ফোকাস করছি। ঈদের পর ওদের স্কিল নিয়ে কাজ করা হবে। কাল আমরা চট্টগ্রাম যাব। সেখানেই হেড কোচ যোগ দেবেন। ভিসার জন্য আবেদন করেছে। সবসময়ই তার ভিসা নিয়ে সমস্যা হয়ে আসছে। ভারতে ভিসা পাওয়া সহজ না। প্রক্রিয়া চলছে, তিনি দ্রুতই দলের সাথে যোগ দেবেন। বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তান দল আসতে পারে। একটি সিরিজ হলে আমরা আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবো।