চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশের বিদায়ী প্রতিনিধির চোখে জাতিসংঘে বাংলাদেশের অর্জন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমীহ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখন বাংলাদেশের প্রস্তাবনাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। যার প্রমাণ বিগত ছয় বছরে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটির সভাপতি ও সদস্য নির্বাচনের ৪২টিতে অংশ নিয়ে কোনোটিতেই হারেনি বাংলাদেশ।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধি এ. কে. আব্দুল মোমেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, এসব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। দেন-দরবার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মহাসচিবসহ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিরা এখন বাংলাদেশের চাওয়াকে সমর্থন করে যা বাংলাদেশের মানবিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লেগেছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১০ সালে UNICE এর সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অধিকাংশ প্রজেক্ট পাশ করিয়ে দেন। এছাড়া বাংলাদেশ UNDP’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। আগে যেখানে সেখানে রাষ্ট্রদূতেরা শুধু বক্তব্যের মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ রাখতেন। এখন বাংলাদেশ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করছে। এটাই আমাদের বড় অর্জন।

রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, এগুলো সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানের জন্য। যে কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কাজ এবং সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে সহায়তা করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত সৈন্যদের বেতন ১৯৯২-২০১২ এই দুই দশকে একটি ডলারও বাড়েনি। কিন্তু আমাদের চেষ্টায় ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল এই দু’বছরে বেড়েছে ৩৭ ভাগ। দেন-দরবার করে ঝুঁকিপূর্ণ ভাতার ব্যবস্থা করেছি। অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য ৩৫০ ডলার করে বেশি পাবেন প্রতিমাসে। যোগাযোগ বাড়ানোর ফলেই শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের মেজর জেনারেল মাকসুদ ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দিতে অন্যান্য দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এতে চীনসহ আরো কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই ভবিষ্যতে সক্ষমতা অর্জনের জন্য এখনই কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সৈন্যদের আরো দক্ষ, আধুনিক, মানসম্মত করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে কারণ চীনা সৈনিকরা যথেষ্ট প্রফেশনাল।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘের নিযুক্ত সদস্য রাষ্ট্রদূতদের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানালেন তিনি। কারণ তারা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা প্রত্যেকে দেশে কম-বেশি হচ্ছে। সন্ত্রাস নির্মূলে একযোগে কাজ করা উচিৎ বলে মনে করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো।

আব্দুল মোমেন বলেন, এই ঘটনার পর সম্প্রতি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত তাকে টেক্সট ম্যাসেজ করেন – তোমার দেশে দুইজন বিদেশী নিহত হয়েছে, আমি তাতে দুঃখিত ও মর্মাহত। প্রতিউত্তরে তিনিও তাকে ম্যাসেজ করে জানান, দেশের এই ঘটনায় আমিও লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি এ জন্যও মর্মাহত যে তোমাদের দেশে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বেশ কয়েকটি হত্যকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এতে হতাহতের সংখ্যাও অনেক। অথচ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারোনি।

রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর বিদেশী দূতাবাসের সতর্কতা জারি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটি মহল এটিকে বড় করে প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, যা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে বলে তিনি মনে করেন। দেশের বিরুদ্ধে এ ধরণের অপ-প্রচার বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের ফোর্স সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বিদায়ী এ রাষ্ট্রদূত।

নভেম্বরেই স্বপরিবারেই দেশে ফিরছেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন। দেশের মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া যে কোনো দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত বলে জানালেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিন দশকেরও বেশি সময় বিদেশে কাটানো আব্দুল মোমেন তার অভিজ্ঞতা দেশের মানুষ তথা তরুণ সমাজের মধ্যে শেয়ার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

নতুন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন-কে স্বাগত জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে তিনি বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।