চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কেন মাথা ঘামাবে ভারত?

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা ভারতের? তার কারণ কি ৪৭ বছর বয়সী এই দেশটির জন্মের সময়ে সহায়তার হাত নিয়ে ভারত পাশে ছিলো বলে, নাকি আরো বেশি কিছু?

ভারতের জন্য বাংলাদেশ বেশি কিছু কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এর একটি কারণ হচ্ছে ভারতের মূলভূমির সঙ্গে বাংলাদেশে উত্তরপূর্ব অংশের মিশ্রণ। যেটা ভারতের ‘লুক ইস্ট’ পলিসির একটি অংশ।

ভারতের মূলভূমি এবং বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব অংশের মধ্যে সংযোগ অনেকটা মুরগির গলার মতো সরু। আর এটা বরাবরই নিরাপত্তার অংশ হয়ে থেকেছে। যদি এই অংশটি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে দেশের একটি বড় অংশ বন্ধ হয়ে যাবে।

এরই মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ বেশি কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যেগুলোর কারণে তারা বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ হয়ে বেশ কিছু পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করতে পারে।

চট্টগ্রাম পোর্টও এখন ভারতের জন্য উন্মুক্ত এবং সেখান দিয়ে ভারত পণ্য সরবরাহ করতে পারে সহজে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে ভারত এখন উত্তরপূর্ব অংশের সঙ্গে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত।

উত্তরপূর্ব অংশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলে বলা যায়, বাংলাদেশ কখনোই বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থল হবে না। উত্তরপূর্ব অংশ থেকে সন্ত্রাসীদের সরাতে নিখাদ ভূমিকা পালন করেছেন শেখ হাসিনা সরকার। এমনটি ভারতে উলফা সন্ত্রাসী অনুপ চেটিয়াকে সরাতেও সাহায্য করেছিলেন তিনি।

আরেকটি নিরাপত্তার ভাবনা হচ্ছে, বাংলাদেশ কখনোই ইসলামী সন্ত্রাসীদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্র হবে না। যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো ২০০০ সালের দিকে যখন জেএমবি রাজত্ব চালাচ্ছিলো আর তাদের নেতা বাংলা ভাই শুধু বাংলাদেশকেই নয়, ভারতকেও সন্ত্রাসিত করে তুলছিলো। ভারতে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর একটি আবাসস্থল ছিলো বাংলাদেশ।

সেই জায়গাটায় শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে নেন শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় এসে পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে রাজত্ব চালানো জেএমবিকে ভেঙে ফেলেন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভারত চায়না, বাংলাদেশ চীনের ‘স্ট্রিং অব পার্লে’র অধীনে থাকুক। যে স্ট্র্যাটেজি ভারতের প্রতিবেশিদের ব্যবহার করে নেওয়া হচ্ছে।

এই পদ্ধতি শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, মিয়ানমার এমনকি সিসিলির সঙ্গেও নেওয়া হয়েছে।

এই বারের নির্বাচনে পশ্চিমা গণমাধ্যম সমালোচকই ছিলো শেখ হাসিনার। এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জায়গা দেওয়ার পরও মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলেছিলো তারা। সবমিলিয়ে পশ্চিমারা একটু চাপে রাখার চেষ্টা করেছিলো শেখ হাসিনাকে।

তবে বাংলাদেশের জিডিপি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে ভারতের অনেক সংস্থা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধারা তৈরি করেছেন তা অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা অনেকের।

দ্রুত বর্ধনশীল উৎপাদন খাতের জন্য, চীনেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর দ্বিতীয় অবস্থানে। গত প্রায় দশক ব্যাপি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি রয়েছে। গত জুনে যেটা ৭.৮৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

এক লেখাতে শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের কঠোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলমান থাকবে শুধু তাই নয় বরং আরো বাড়বে। ‘আমরা আশা করছি আগামী পাঁচ বছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ হবে। আর আশা করি ২০২১ সালের মধ্যে সেটা ১০ শতাংশে যাবে।  আমার মনে সবসময় বড় বড় মাত্রা ধরা দেয়। কেন ছোট মাত্রার ভবিষ্যৎবানী করবো?’

বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যের থেকেও বেশি হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বেড়েছে রপ্তানীও। বেড়েছে প্রবাসী আয়।

তবে বাংলাদেশে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও ভাবনা আছে। মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করার জন্য প্রায়শই সেখান থেকে টাকা আসছে বাংলোদেশে। যেটা ইসলামিক শিক্ষাকেও উৎসাহিত করছে।  কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, যেভাবেই হোক সৌদি অর্থ বাংলাদেশে আসছে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে।

শেষ পর্যন্ত ভারত একটি স্থির বাংলাদেশ দেখছে। বাংলাদেশ যদি নিজে নিজের ভালো বুঝতে পারে, তারা ভারতের সীমান্ত রাজ্যগুলোতে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে করবে যেটা পূর্বের জনমিতিকে প্রভাবিত করেছে।  সুস্থ ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি একটি ভালো পাওয়া বলেই মনে করছে ভারত। সেজন্যই এত মাথাব্যথা।

লেখক: মনিদিপা ব্যানার্জি, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক্সিকিউটিভ এডিটর।