মানব সেবার স্বীকৃতি হিসেবে দেয়া হারম্যান মেইনার অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’র জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের ডা. মোহাম্মদ আরিফুল হক। এ পুরস্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চারজনকে বাছাই করা হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটের অধিকারীকে দেয়া হয় এ অ্যাওয়ার্ড।
প্রতি দুই বছরের জন্য মানব সেবায় এসওএস শিশু পল্লী ইন্টারন্যাশনাল এর পক্ষ থেকে হারম্যান মেইনার অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এ বছর সেখানে স্থান পান কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ডা. মোহাম্মদ আরিফুল হক।
একটি মূল্যবান ভোট আরিফুলকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সহায়তা করবে। তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করা হলে বাংলাদেশেরই জয় হবে, বিশ্ব জানবে মানবতার সেবায় বাঙালিরাও পিছিয়ে নেই, দেশের ভাবমূর্তি আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
আরিফুলকে ভোট দেওয়া যাবে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। www. sos childrensvillages.org/hermann-gmeiner-award-2018 এই এই লিংকে গিয়ে ভোট দিতে হবে।
আরিফুল সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সাবেক (১০ম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামেও পরিচিত।
২০১৪ সালে এমবিবিএস পাশ করে মিশরে পাড়ি জমান ২০১৬ সালে। ডা. আরিফুল বর্তমানে মিশরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাসার এল আইনী মেডিকেল স্কুলে অর্থোপেডিক সার্জারীতে মাস্টার্স করছেন।
এসওএস শিশু পল্লীতে বড় হওয়া আরিফুল তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে মেডিকেল জীবনের প্রায় পুরোটা অংশ কোনো না কোনোভাবে মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে (সিডর, আইলা) মানুষের পাশে থেকে দুঃখ দুর্দশা লাঘব করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে আটকে পরা মানুষদের উদ্ধারে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবায়ও অংশগ্রহণ করেছেন।
রোহিঙ্গা সংকটের কথা শোনা মাত্র নিজের মাসের খরচ ব্যয়ে উড়ে চলে আসেন উখিয়ায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে মিলে রোহিঙ্গা শিবিরের দুঃস্থ, অসুস্থ প্রায় ১২শ শিশু ও বৃদ্ধকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
দেশের পাশাপাশি মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েছেন বিদেশ এবং বিদেশীদের জন্যও। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে ক্ষত-বিক্ষত নেপালের জন্য সাহায্য তুলেছেন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হারে পাকিস্তান যখন দিশেহারা তখন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহর চৌধুরীর সাথে সেখানে যান। তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করে অত্যন্ত সুনামের সাথে ফিরে আসেন।
মিশরে গিয়েও থেমে থাকেননি আরিফুল, প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বর্তমানে কায়রোতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্য ফ্রি ফ্র্রাইডে ক্লিনিক চালু করেছেন, যেখানে তিনি নিয়মিত ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন, তার সেবা গ্রহণ করেছেন প্রায় ৪শ বাঙালি বৃদ্ধ ও ২শ বাঙালি শিশু। মিশরে অবস্থিত প্রবাসীদের জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে তার দরজা সব সময় খোলা।
ডা. মোহাম্মদ আরিফুল হক জানান, স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সাধারণ মানুষের জন্য এমন একটি হাসপাতাল করতে চান যেখানে স্বল্প খরছে সর্বাধুনিক সেবা পাওয়া যাবে। তিনি বাংলাদেশের অর্থোপেডিক সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে চান।
আত্মপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সমাজের জন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের জন্য প্রতি দুই বছরে হারম্যান মেইনার অ্যাওয়ার্ড এ ভূষিত করা হয়।