চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বহু প্রেমে আপত্তি জানানোয় মেয়ের হাতে মা খুন

বহু ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকা নিয়ে মা রাগারাগি করায় তাকে বন্ধুদের সহায়তায় শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ১৯ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে।

ভারতের হায়দরাবাদের হায়াতনগর এলাকার দ্বরাকা কলোনিতে এ ঘটনা ঘটেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে ঘটা এ ঘটনায় প্রথম মেয়েটি এ ঘটনার দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিল বাবার ওপর। বলেছিল, তার বাবা মাকে ‘নির্যাতন’ করত।

কিন্তু এই মিথ্যার সূত্র ধরেই একে একে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা।

দ্বরাকা কলোনির অধিবাসী ৩৮ বছর বয়সী রজিতাকে হত্যার ঘটনায় বর্তমানে তার মেয়ে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কীর্তি রেড্ডি, তার প্রেমিক বাল্য রেড্ডি এবং শশী নামের আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ২৪ অক্টোবর রজিতার স্বামী লরি চালক শ্রীনিবাস রেড্ডি বাসায় ফিরে বাসার দরজা বন্ধ দেখে স্ত্রীর ফোনে কল দেন। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পেয়ে মেয়ে কীর্তিকে কল দেন তিনি। কীর্তির ভাষ্যমতে সে তখন ভিজাগে বেড়াতে গিয়েছিল। তার পরিবারও তা-ই জানত।

শ্রীনিবাস মেয়েকে জানান যে তার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কীর্তিকে তক্ষুণি বাড়ি ফিরতে বলেন। কীর্তি অবশ্য আরও দু’দিন পর ফিরে থানায় মায়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করে।

অভিযোগে কীর্তি জানায়, তার বাবা একজন মদ্যপ। তিনি প্রায়ই রজিতার সঙ্গে ঝগড়া করতেন, এমনকি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মাঝেমাঝে মারধরও করতেন।

বাড়ি ফেরার পর শ্রীনিবাস কীর্তিকে তার ভিজাগ সফর নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু কীর্তি অসংলগ্ন উত্তর দিতে শুরু করলে শ্রীনিবাস তাকে সন্দেহ করা শুরু করেন।

এরই মধ্যে রজিতার নিরুদ্দেশের খবর পেয়ে কীর্তির প্রেমিক বাল্য রেড্ডির বাবা একই এলাকা হায়াতনগরের অধিবাসী শ্রীনিবাসের সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসেন। তিনি জানান, রজিতার জোরাজুরিতে কীর্তি ২২ অক্টোবর থেকে তাদের বাসায় থাকছিল।

কীর্তি ভিজাগ যাওয়া নিয়ে মিথ্যা বলেছে জানতে পেরে সাথে সাথে শ্রীনিবাস বিষয়টি হায়াতনগর পুলিশকে অবগত করেন। পুলিশ কীর্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে কীর্তি।

কীর্তি জানায়, গত ১৯ অক্টোবর একসাথে কয়েকটি প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কারণে রজিতা তাকে প্রচণ্ড রকম তিরস্কার করেন। বিরক্ত হয়ে কীর্তি তার প্রতিবেশী ও বান্ধবী শশীর সঙ্গে পরিকল্পনা করে সেই রাতেই মাকে ঘুমের মধ্যে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে।

পুলিশ জানিয়েছে, ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মায়ের মরদেহসহ বাসায়ই ছিল কীর্তি। লাশে পচন শুরু হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলে শশীর গাড়িতে করে থাম্মালাগুড়া এলাকায় নিয়ে রেললাইনের ওপর মরদেহটি ফেলে আসে কীর্তি, যেন পরে দেখে রেল দুর্ঘটনা মনে হয়।

এরপর কীর্তি মায়ের কণ্ঠ নকল করে বাল্য রেড্ডির বাবাকে ফোন করে জানায় যে, রজিতা ও শ্রীনিবাসকে যাদাদ্রি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। তাই যেন তাদের ফেরা পর্যন্ত কয়েকটাদিন কীর্তিকে তাদের বাসায় রাখা হয়। অন্যদিকে শ্রীনিবাসকে কীর্তি বলেছিল সে ভিজাগ যাচ্ছে।

কীর্তির স্বীকারোক্তির পর হায়াতনগর পুলিশ তার ফোনের লোকেশন যাচাই করে ওই সময়টায় তার হায়াতনগরে অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হয়।

পরে সরকারি রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে হায়াতনগর পুলিশ রেললাইনে এক নারীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন মরদেহ পাওয়ার কথা জানতে পারে, যে ঘটনায় ‘রহস্যজনক মৃত্যু’র মামলা করে লাশটি দাফন করে ফেলা হয়েছে।