মাহফুজুর রহমান ২০০৭ সালে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তবে বিভিন্ন কারণে পরিবারের সদস্যদের মারধর করতেন এবং ঘরে ভাঙচুর চালাতেন। একসময় অতিষ্ঠ বাবার দায়ের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার হন কনস্টেবল ছেলে মাহফুজ।
ওই মামলায় ২৮ দিন খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। আর সেই সময় জেলখানায় এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আর পেছনে ফিরে তাকোতে হয়নি মাহফুজকে, পুলিশ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিলেন ইয়াবার ব্যবসা।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর আরামবাগ এলাকা থেকে ১০ হাজার ১০০ পিস ইয়াবাসহ মাহফুজুর রহমানকে আটক করে র্যাব-২। এএসআই র্যাংকের ইউনিফর্ম পরিহিত মাহফুজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩১ হাজার ৮০০ টাকা।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার মাহফুজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (সিএমপি) বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালনের পর এক পর্যায়ে খুলনা মেট্রোপলিটনে (কেএমপি) বদলি হয়ে আসেন।
ফৌজদারী অপরাধের জন্য ২০১৩ সালে চাকরিচ্যুত হন কনস্টেবল মাহফুজ। জেলখানায় পরিচয় সূত্রে ওই মাদক ব্যবসায়ীর হাত ধরে হয়ে ওঠেন ইয়াবা ব্যবসায়ী। সুবিধা পেতে কনস্টেবল হিসেবে বহিষ্কৃত মাহফুজ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। পুলিশের ভুয়া পোশাক ও পরিচয়পত্রের আড়ালে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতেন খুলনা এলাকায়।
আশিক বিল্লাহ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশের ইউনিফর্মে এএসআই র্যাংক ব্যাজ পরা এক যাত্রীকে বাসের সিটে বসে থাকতে দেখে তার চাকুরীস্থল ও আইডি কার্ড দেখতে চায় র্যাব সদস্যরা। এ সময় তিনি চট্রগ্রামে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছেন এবং তার পোস্টিং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বলে জানান।
মাহফুজুর রহমান নামের ওই ব্যক্তির গলায় ঝুলনো পরিচয়পত্রে কনস্টেবল পদ এবং পরিচয়পত্রের সঙ্গে জন্ম তারিখ ও পুলিশের বিপি নাম্বারে মিল না থাকায় র্যাব সদস্যরা তাকে তল্লাশী করবেন বলে জানান। এক পর্যায়ে মতিঝিল থানা পুলিশ সদস্যদের সামনে তল্লাশী করে তার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার ১০০পিস ইয়াবা ও নগদ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কথিত এএসআই মাহফুজুর জানান, তিনি একজন বহিষ্কৃত পুলিশ সদস্য। একটি মামলায় ২৮ দিন জেল খাটেন এবং চাকুরীচ্যুত হন। জেল থেকে বেরিয়ে ইয়াবা সেবনকারী থেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এ পর্যন্ত মোট ৬ বার কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে খুলনা পৌঁছে দিয়েছেন জানিয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, সপ্তম বারের চালান পৌঁছানোর সময় তাকে আটক করা হলো। তিনি খুলনার ওই মাদক ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী সিভিল পোশাকে কক্সবাজারের গিয়ে কোনো হোটেলে অবস্থান করতেন। সেখানে তার কাছে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়া হতো। তারপর পুলিশের পোশাক পড়ে সেসব ইয়াবা ঢাকা হয়ে খুুলনা পৌঁছে দিতেন। প্রতিবার চালানের জন্য তাকে ২০-৫০ হাজার টাকা দেওয়া হতো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে পুলিশ পরিচয় দিতেন মাহফুজুর। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং খুলনার ওই মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান আশিক বিল্লাহ।