ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ৭টা ছুঁইছুঁই করছে। নগরের বুকে তখন স্নিগ্ধ ফাল্গুনী বাতাস। বলছিলাম গেলো বৃহস্পতিবারের কথা। রাজধানীর লালমাটিয়ায় ‘বেঙ্গল বই’ প্রাঙ্গণে কোন সুরমূর্ছণার সূচনা লগ্নের টান টান অপেক্ষা। দর্শক সারিতে বসে আছেন বিদগ্ধ শ্রোতামণ্ডলী। হঠাৎ মঞ্চের আলো জ্বললো। মঞ্চে গিয়ে বসলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি মূলত অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক। আর অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘মোদের গরব মোদের আশা’ শীর্ষক অডিও সিডির প্রকাশনা অনুষ্ঠান।
শিল্পী সিফায়েত উল্লাহ মুকুলের কণ্ঠে ধারণ করা অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের সংকলন নিয়ে ‘মোদের গরব মোদের আশা’ অ্যালবামটি। তিন কবির গান নিয়ে এটি বেঙ্গলের দশম অ্যালবাম।
সিফায়েত উল্লাহ মুকুল পেশায় উন্নয়ন কর্মী হলেও মননে একনিষ্ঠ সংস্কৃতিকর্মী। শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি বিশিষ্ট সংগীতগুরুদের সান্নিধ্য পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী, সেলিনা মালেক চৌধুরী, অপলা নভেদ, মিতা হক, লাইসা আহমেদ অন্যতম। নিবিড় পরিচর্যা পেয়েছেন শিল্পী-শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদের কাছে। ছায়ানটের সংগীতবিদ্যায়তনের সনদ পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ‘জাহেদুর রহমান স্মৃতি পুরস্কার’ প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম মান পেয়েছেন। বর্তমানে সংগীতশিক্ষক ও সংগঠক হিসাবে ছায়ানট এবং জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত আছেন। নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন বাঙালি সংস্কৃতি ও মূলধারার সংগীতপ্রসারে। রবীন্দ্রনাথ ও তিনকবির গান চর্চায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন।
অনুষ্ঠানে অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. সারওয়ার আলী। সে সময় তিনকবির গানকে কণ্ঠে ধারণ করার জন্য সিফায়েত উল্লাহ মুকুলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, কাজটা কঠিন, আর মুকুল সেই কঠিন কাজটাই করেছেন সার্থকভাবে।
মোড়ক উন্মোচন শেষে শিল্পী সিফায়েত উল্লাহ মুকুল গান পরিবেশন করেন। গানের মূর্ছণায় ফাল্গুনী সন্ধ্যায় ‘বেঙ্গল বই’ প্রাঙ্গণে নেমে আসে সুরসুধায় আচ্ছন্ন আবহ। এই ভাষার মাসে শিল্পী যখন তার মায়া মাখানো ভরাট কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন ‘মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা’ উপস্থিত শ্রোতা-দর্শক মোহগ্রস্ত হয় সুর ও সংগীতে। তারপর শিল্পী গেয়ে চলেন একের পর তিনকবির গান। শ্রোতারাও স্থির হয়ে আকণ্ঠ ডুবে থাকেন সংগীতে।
গান শেষে শিল্পী সিফায়েত উল্লাহ মুকুলের কাছে চ্যানেল আই অনলাইনের প্রশ্ন, কেন অ্যালবামে শুধু তিন কবির গান? স্মিত হেসে উত্তর দিলেন তিনি, ’আসলে রবীন্দ্র-নজরুলের চেয়ে অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই তিনকবির গান নিয়ে চর্চাটা কম। অথচ এই তিনকবির গানের কথা ও সুর হৃদয়ের গভীরে দ্যোতনা তৈরি করে। এই গানগুলোর কোন স্বরলিপি নেই। আদিতে গানগুলো যেভাবে গাওয়া হয়েছিলো আমার চেষ্টা ছিলো তা হুবহু ধরে রাখার।’
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘মোদের গরব মোদের আশা’ অ্যালবামটি তাদের জন্যই যারা শুদ্ধ সংগীত শুনতে চান, যারা প্রকৃত সংগীতকে ভালোবাসেন।’