বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন ইংল্যান্ডের পেস বোলার জফরা আর্চার। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সফরের প্রথম টেস্টের পঞ্চমদিন বে ওভালে ঘটেছে এমন ঘটনা। ফুটবলে হরহামেশা ঘটলেও যা সচারাচর ক্রিকেটে দেখা যায় না।
আর্চার এ নিয়ে টুইট করার পর হইচই পড়ে যায় ক্রিকেট দুনিয়ায়। ম্যাচের পর টুইটারে তিনি লেখেন, ‘দলকে বাঁচানোর জন্য ব্যাটিং করার সময় বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য শুনেছি। এটা যেমন বিরক্তিকর, তেমনই অপমানিত বোধ করছি।’
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৬৫ রানে হেরেছে ইংল্যান্ড। পঞ্চমদিন টেস্ট বাঁচানোর জন্য লড়ছিল জো রুটের দল। শেষ দিকে নবম উইকেটের জুটিতে আর্চার ও স্যাম কারান ৫৯ রান যোগ করেন। টেস্ট বাঁচানোর ওই মরিয়া চেষ্টার সমর্থন যেমন ইংল্যান্ড সমর্থকরা করছিলেন, তেমনই কিউই সমর্থকদের পক্ষ থেকে ছিল জয়ের অপেক্ষা। ৫০ বল খেলে ৩০ রান করে আউট হন আর্চার। আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে গ্যালারি থেকে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় আর্চারকে। যা নিয়ে ব্যাপক আহত হয়েছেন ক্যারিবিয়ানজাত এই পেসার।
আর্চার একই সঙ্গে টুইটারে লিখেছেন, ‘সারা সপ্তাহ জুড়ে সমর্থকরা সত্যিই চমৎকার আচরণ করেছেন। শুধুমাত্র ওই লোকটি ছাড়া। তবে বার্মি আর্মির একই রকম সমর্থন পেয়েছি।’
আর্চারের টুইটের পর দুই দেশের ক্রিকেট কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যায়। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে তদন্তও। মাঠে ও গ্যালারিতে যে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে, তার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বলেছে, ‘প্রথম টেস্টের পঞ্চমদিন আর্চারকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবিদ্বেষীমূলক মন্তব্য করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনার গভীরে ঢুকে তদন্ত শুরু করেছে। তার জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে। মাঠের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে খুঁজে বের করা হচ্ছে।’
এই রকম ঘটনা এর আগে ক্রিকেটে বিক্ষিপ্তভাবে ঘটেছে। ইপিএল বা অন্যান্য খেলায় এর প্রভাব আরও বেশি। আর সেই কারণেই আর্চারের এই ঘটনা নিয়ে আরও বেশি কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড।
ইসিবির বিবৃতিতে এও বলা হয়েছে, ‘সমস্ত মাঠে ক্রিকেট সমর্থকরা যাতে নির্বিঘ্নে ক্রিকেট দেখতে ও উপভোগ করতে পারেন, তার সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদিও ঘটনাটা বিচ্ছিন্ন, তবু এটা পরিষ্কার যে, কোনো রকম সমাজ বিরোধী কাজ বা বর্ণবিদ্বেষী আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনো সমর্থক এ নিয়ে যেকোনো সময় খোলাখুলি মন্তব্য করতে পারেন।’
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড আর্চারের এই অভিযোগে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। এক বিবৃতিতে তড়িঘড়ি তারা জানিয়েছে, ‘জফরা আর্চারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমা চাওয়া হবে। এই অভিযোগ পাওয়ার পরই গ্যালারিতে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সেই লোকটিকে খুঁজে বের করা হবে। যে আর্চারকে এই ধরনের মন্তব্য করেছে।’
সমর্থকদের সতর্ক করে কিউই বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোনোভাবেই এই রকম আপত্তিকর মন্তব্য সমর্থন করে না ক্রিকেট বোর্ড। অভিযুক্ত ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে। অনভিপ্রেত এই রকম ঘটনার মুখ পড়তে হল বলে আর্চারের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। একই সঙ্গে আমরা এও নিশ্চিত করছি যে, আগামী টেস্টগুলো এই রকম কোনো ঘটনা ঘটবে না।’
আর্চারের কাছে দলের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও।
আর্চার টুইটারে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তোলার পর থেকে দুই দেশ তো বটেই আইসিসিও নড়েচড়ে বসেছে। দুই দেশের বোর্ডকে পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।