দেশে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে লাখো মানুষ। কোথাও কোথাও সড়ক ও ব্রিজ পানিতে ভেসে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যার মধ্যে এ পর্যন্ত পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে মারা গেছে ৭ জন। কক্সবাজার, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সিলেটে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়নের ২৫ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানির নিচে। স্কুল, মাদ্রাসা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। জামালপুরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে জামালপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ইসলামপুর উপজেলার পৌর এলাকাসহ তলিয়ে গেছে পশ্চিমাঞ্চলের নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা, পাথর্শী ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। পানির তোড়ে বলিয়াদহ ব্রিজের একাংশ ভেঙ্গে গেছে। পানি উঠায় প্রায় ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের দেড় শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চিলমারী, উলিপুর, ও সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি এখন দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা তিন লক্ষাধিক। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে ৯টি উপজেলার ২ লাখেরও বেশি মানুষ। এখানেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে ৭৮টি মেডিকেল টিম, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। দেশের এই কয়েকটি জেলা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যা বাংলাদেশের একটি অনিবার্য দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রায় বিধ্বস্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও ভৌগলিক কারণে বারবার দেশে ঘূর্ণিঝড়-বন্যা হয়ে থাকে।এইসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে প্রতি বছর। লক্ষ লক্ষ মানুষ পড়ে মানবিক বিপর্যয়ে। প্রতিবেশি দেশের উৎসে থাকা নদনদীগুলোতে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণেও প্রতি বছর বন্যায় তলিয়ে যায় দেশের অনেক এলাকা। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে পানিবন্দী মানুষদের যথাযথ সহযোগিতা এবং বন্যা মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি জোরদার করার এখনই সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই।