প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবছর বেশ কয়েকবার আঘাত হেনেছে দেশের উপরে। পাহাড় ধস, হাওরে বন্যার পরে আবার বন্যার কবলে সারাদেশ। দুর্যোগগুলোর সময়ে বিপন্ন মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে সচেষ্ট সারাদেশের সাধারণ মানুষ। ত্রাণ হাতে অনেকেই চলে গেছেন বানভাসি মানুষগুলোর কাছে।
এবার সেই বিষয় নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ গোলাম নবী।
ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, বন্যা আগামী বছরও হবে। এরপরের বছরও হবে। তারপরের বছরও হবে। কতোবার ত্রাণ নিয়ে ছুটবেন আপনি?
বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ নিয়ে ছোটার চেয়ে ভালো কোন সমাধান থাকার পরও কেন আপনি ত্রাণ নিয়েই ছুটবেন প্রতিবছর? দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উত্তম পথ বাদ দিয়ে মধ্যম কিংবা নিম্ন মানের ব্যবস্থা নিয়ে কেন আপনি প্রতিবছর ৩৬৫ দিন কাটাবেন, সেই প্রশ্নটি কি একবারও নিজেকে করেছেন?
এরপরে গোলাম নবী লিখেছেন, আসুন, আমরা যে যার জায়গা থেকে সমস্যার উত্তম সমাধানের জন্য আওয়াজ তুলি। যার কাজ তাকে করতে দেই। নিজের কাজ নিজে করি। অন্যের কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে নিজের কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত না করি।
দেশটা সবার। কিন্তু সবার জন্য সব কাজ নয়। নিজের মূল দায়িত্বগুলো পালন করার মধ্য দিয়েই দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। সেসঙ্গে যার যে কাজ সেটি যদি কেউ না করে তাকে জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
সবসময় মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছিল একটি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ সুখী বাংলাদেশ তৈরির জন্য। পাকিস্তানীদের কাছ থেকে শোষণমুক্ত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির জন্য। পাকিস্তান আমলে উন্নয়নের সুফল পশ্চিম পাকিস্তানীরা ভোগ করত আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীরা সবসময় বঞ্চিত হতো। সেই বঞ্চনামুক্ত হওয়ার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল বীর বাঙালী। দেশকে স্বাধীন করেছিল। সুষম উন্নয়ন বঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানীরা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার পর গত ৪৬ বছরে দেশে সুষম উন্নয়ন কি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? এই প্রশ্ন আমাদেরকে সবসময় নিজেকে করতে হবে। এবং যদি না করে থাকতে পারে তাহলে আমাদেরকে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
সবশেষে তিনি লিখেছেন, বন্যা মোকাবেলায় এমন একটি ব্যবস্থা তৈরির পথে এগোতে হবে এবং সেটাই বেশি জরুরি। সুষম উন্নয়ন করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। তখন ত্রাণ নিয়ে প্রতিবছর দেশের আনাচে কানাচে ছুটতে হবে না আপনাকে। যা করার স্থানীয় প্রশাসন ও রাষ্ট্র করবে। পাকিস্তান আমলেও বন্যা মোকাবেলায় যা করতে হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৬ বছর পরেও যদি সেটাই করতে হয় তাহলে আমাদের অর্জন কী হলো? আমাদেরকে সবসময় নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে? এবং প্রশ্নের মূল জায়গাটা হবে- স্বাধীনতার চেতনা।