চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

বন্ধ হয়ে গেল জামালপুরের একমাত্র সিনেমা হল ‘মনোয়ার’

‘বর্তমান সময়ে ছবির ব্যবসা মন্দা ও হলের মালিক দুজনের মধ্যে কোন্দলের কারণে বন্ধ হয়েছে গেছে মনোয়ার’

জামালপুর জেলা সদরে ছিল ‘কথাকলি’, ‘নিরালা’, ‘সুরভী’ ও ‘মনোয়ার’ এই চারটি সিনেমা হল। ‘কথাকলি’ আগুনে পুড়ে অনেক বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর ২০১১ সালে বন্ধ হয়েছে ‘নিরালা’ সিনেমা হল। ‘সুরভী’ সিনেমা হল ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। সদরে ছিল একমাত্র সিনেমা হল ‘মনোয়ার’, শেষ পর্যন্ত সেটিও গেল বন্ধ হয়ে।

মনোয়ার সিনেমা হলে ছবির বুকিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন বুকিং এজেন্ট মো. শাহজাহান। গত দেড় বছর ধরে তিনি এই হলে ছবি প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ করতেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে মনোয়ার সিনেমা হল বন্ধের খবর নিশ্চিত করেছেন এই বুকিং এজেন্ট।

তিনি বলেন, ছবির ব্যবসা মন্দা ও হলের মালিক দুজন তাদের মধ্যে কোন্দলের কারণে বন্ধ হয়েছে গেছে মনোয়ার। এখন জামালপুর জেলা সদরে আর কোনো হল নেই।

২ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে মনোয়ার সিনেমা হল। সর্বশেষ সেখানে আমদানি করে ‘ভিলেন’ ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছিল। দুদিন চালানোর পরেই হলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতন বাকি রয়েছে। হলে চালানোর মতো নতুন ছবিও নেই। নতুন করে হলটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেখানে মার্কেট অথবা একটি বেসরকারি ক্লিনিক নির্মিত হতে পারে বলে জানান বুকিং এজেন্ট মো. শাহজাহান।

যেসব ছবি নির্মিত হয় সেগুলো দর্শক দেখতে চায় না। চলতি বছর দুটি ছবি থেকে লাভের মুখ দেখেছে মনোয়ার সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ। বুকিং এজেন্ট শাহজাহানের ভাষায়, ‘পোড়ামন ২’ ভালো চলেছিল। আর ‘ভাইজান এলো রে’ থেকে বাম্পার ব্যবসা হয়েছে। বছরে দুই ছবির লাভ দিয়ে এতো বড় হল টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। এই দুটি ছাড়া লাভ হয়েছে বলার মতো আর ছবি নেই।

জানা যায়, ২০১৪ সালের দিকে মনোয়ার সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যৌথ প্রযোজনার ছবি ও জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে নির্মিত ছবিগুলো প্রদর্শনের পর হলটি ঘুরে দাঁড়ায়। দর্শক হলে আসা শুরু করে। পরবর্তীতে মনোয়ার সিনেমা হলে জাজের মেশিন বসানো হয়। এখন যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। দর্শক হল বিমুখ হয়েছে।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মনোয়ার সিনেমা হলে জাজের মেশিন আছে। সেখানে ঠিকভাবে ছবি দিতে পারলে ভালো ব্যবসা হতো। ছবি সংকট মনোয়ার সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ। দর্শক যেমন ছবি চায়, তেমন ছবি খুব কম নির্মাণ হচ্ছে।

চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি দিপু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সিনেমা হলের খাদ্য হচ্ছে ভালো ভালো সিনেমা। ছবিই তো নির্মাণ হচ্ছে না, তাহলে হল চলবে কীভাবে?

ভালো ছবির অভাবে সামনে আরো অশনী সংকেতের কথা বলে বুকিং এজেন্ট সভাপতি আরো বলেন, শুধু জামালপুরের মনোয়ার নয়, ফেনী জেলার বিখ্যাত কানন সিনেমা হলও ভাঙা হবে। ভালো ছবির অভাবে দর্শক হলে আসছে না। একে একে এভাবে সব হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মফঃস্বলের যে হলগুলো রয়েছে বেশির ভাগ হলে চলছে ‘দহন’ ও শাকিব খানের পুরাতন ছবি। ডিসেম্বর মাস জুড়ে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো নতুন ছবি নেই। তাই শাকিব খানের ছবি দিয়েই হল সচল রাখতে হচ্ছে।