দেশজুড়ে গত কয়েক মাস ধরে চলা মাদকবিরোধী অভিযানে অন্তত তিন শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পরও মাদক কেনা-বেচা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর মাদক হিসেবে পরিচিত ইয়াবার সরবরাহ বন্ধ হয়নি। আর সরবরাহ যে বন্ধ হয়নি তার প্রমাণ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে লবণ বোঝাই কাভার্ড ভ্যান থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা মূল্যের ২ লাখ ৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা।
১৬ মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর এক চালানে এত বিপুল সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম। তবে কয়েক হাজার পিস করে ইয়াবা উদ্ধারের একাধিক ঘটনা বলতে গেলে প্রতিদিনই ছিল। এর কারণ অভিযানে ইয়াবার মূল সরবরাহকারীদের ধরতে না পারা।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অথবা নিজেদের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে যেসব মাদক কারবারি নিহত হয়েছে; দেখা গেছে তারা ছিল ওই এলাকার মাদক সরবরাহের সাথে জড়িত। কিন্তু বড় বড় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা মাদক সরবরাহ করতো তারা অভিযান শুরু হওয়ার পর পরই অাত্মগোপনে চলে যায়। অভিযান শিথিলতার কারণে তারা এখন আবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
আরেকটি বিষয় হলো ইয়াবা বন্ধে মিয়ানমার বাংলাদেশকে কোনো রকম সহযোগিতা করছে না। অথচ ফেনসিডিলের চোরাচালন বন্ধে ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ৩ আগস্ট চাঁদপুরে মাদকবিরোধী এক সমাবেশে এরকম কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী।
মূলত মিয়ানমার হাজার হাজার কোটি টাকার এই কালো বাণিজ্য বন্ধে অাগ্রহী নয়। এ জন্যই সেদেশে থাকা অসংখ্য ইয়ারা তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি তারা। কোনো দিন নেবে বলেও মনে হয় না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অন্যপথ খুঁজতে হবে। মিয়ানমারের সরবরাহ লাইন বন্ধ করা গেলেই কেবল দেশকে ইয়াবার হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা সম্ভব।
মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধে অারেক বড় বাধা নাফ নদী। সেখানে কোস্টগার্ড এবং বিজিবি তাদের মতো করে কাজ করে। তারপরও ইয়াবা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ নাফ নদীর চার হাজারের বেশি মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। এই সব নৌকা এবং ট্রলারই বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের মূল বাহন। এসব নৌকা বা ট্রলার নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো পদক্ষেপের কথা আমরা শুনিনি।
তাই অামরা মনে করি, যতক্ষণ ইয়াবার সরবরাহ পথ বন্ধ না করা যাবে, ততক্ষণ মাদকবিরোধী অভিযান পুরোপুরি সাফল্য পাবে না। যে কোনো উপায়েই হোক না কেন; মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবার প্রবেশ বন্ধ করতেই হবে।