সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সাথে আমি যুক্ত ২০০৮ সাল থেকে। চেনা অচেনা মানুষের সঙ্গে বন্ধন তৈরি হতে হতে ভার্চুয়াল এই প্ল্যাটফর্মে আমার বন্ধু সংখ্যা পৌঁছায় সাড়ে তিন হাজারে। কিন্তু গত ১৫ এপ্রিল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় আমার ফেসবুক আইডি! যা আমার কাছে ব্যক্তিগত এক সামাজিক যোগাযোগ ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবেই বিবেচ্য।
অনাকাঙ্ক্ষিত এইরূপ ‘দুর্ঘটনায়’ অনেকটা থমকে গিয়ে আমি আমার বন্ধুদের বিষয়টি জানাই। তারা হাস্যরস নিয়ে আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে, কেন তোমার আইডি বন্ধ করলো ফেসবুক? কী করেছো তুমি ? খারাপ কিছু করোনি তো ? মন খারাপের মধ্যেও আপন প্রিয় বন্ধুদের এইরূপ জিজ্ঞাসায় বিরক্ত কিংবা বিব্রত হইনি। কেবলই সরলতায় তাদের বলেছি, আইডি বন্ধ হওয়ার মত কিছুতো আমি করিনি।
অবিশ্বাসের ঘোরে আচ্ছন্ন থাকা মানুষের এই পৃথিবীতে কে বিশ্বাস করে আমার কথা! তবে এরপরই গণমাধ্যমে খবর আসে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঠেকাতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সন্দহজনক ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিচ্ছে এবং বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে এরইমধ্যে অসংখ্য ফেসবুক আইডি বন্ধও করে দিয়েছে। গণমাধ্যমের এই সংবাদ তখন দুঃখের মাঝেও যেন আমাকে একটু স্বস্তি এনে দেয়। নিজেকে কেবলই একমাত্র ‘ভিকটিম’ মনে হতে থাকা মানসিক অবস্থা থেকে আমি রেহাই পাই। তখন নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেই, যাক অন্যদেরওতো বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু আমি একা নই।
কিন্তু সবকিছুর পরও সাড়ে তিন হাজার বন্ধু হারানের কষ্ট আমাকে মাঝে মাঝেই স্তব্ধ করে দেয়। তাই অ্যাকাউন্ট ফিরে পাবার উপায় খুঁজতে গিয়ে দেখি আপিল করার সুযোগ আছে। অবশেষে সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে ফেসবুক বরাবর আপিল করি। ফেসবুক ফিরতি বার্তায় জানায়, আমার আপিল তাদের বিবেচনায় রয়েছে এবং পরবর্তীতে আমাকে এ বিষয়ে জানানো হবে। এরপর থেকেই কেবল আমার আইডি ফিরে পাবার অপেক্ষা। সাত দিন হয়ে যাবার পরও সে অপেক্ষা এখনো বর্তমান।
তবে অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকলে তো আর জীবন থেমে থাকবে না। আর অনলাইন গণমাধ্যমের একজন কর্মী হিসেবে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করা জরুরি বলেই দ্রুত আবার নতুন একটি ফেসবুক আইডি খুলতে বাধ্য হই।
কিন্তু এবার বাঁধে আরেক বিপত্তি! অনেক চেনা বন্ধুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেই তারা মেসেজে জিজ্ঞেস করে ‘ভাইয়া এটা কি আপনি? আপনার আগের আইডিতেতো যুক্ত ছিলাম। নাকি এটা ফেইক আইডি?’ এইরূপ উদ্ভুত বাস্তবতায় এই আমাকেই আবার লিখতে হয়, ‘আমি ফেইক না। ফেসবুক আমার আগের আইডিটা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই এটা নতুন করে খুলেছি! আমাকে যুক্ত করুন।’
নাটকীয়তার এখানেই শেষ নয়! এক বন্ধু আমার নতুন আইডিটি ‘রিয়েল’ না ‘ফেইক’ তা যাচাইয়ের জন্য ইনবক্সে লিখে, ‘বলোতো আমাদের ভার্সিটির ওই স্যার এখন কোথায় আছেন? আমার নতুন ফেসবুক আইডি যে রিয়েল সেটা প্রমাণের জন্য সেই বন্ধুকে আমি লিখি: আমাদের স্যার ওই দেশে আছেন। এরপর আমি ‘হি হি হি’ লিখে হাসি আর আমার সেই বন্ধুও ‘হি হি হি’ লিখে পাঠায়! হয়তো সেও ওপাশে তখন হাসে!
নতুন ফেসবুক আইডি খোলার পর থেকেই নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি! হয়তো এভাবেই চলবে আরো অনেকদিন। নতুন আইডিতে বন্ধু বাড়তে বাড়তে একসময় হয়তো তা হাজার ছুঁবে। কিন্তু অনুভূতির এক কোণে জীবন্ত হয়ে থাকবে বন্ধ হওয়া সেই ফেসবুক আইডি যেখানে রয়ে গেছে ভালোবাসার কথনে ভরা একটা ‘ইনবক্স’ আর রঙিন স্মৃতির কিছু ছবি।