বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ফরমান আলীর মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল না। তবে কিছুটা ক্রুটি ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া।
সোমবার রমনার ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আসন্ন রমজান মাসের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: তদন্ত শেষে কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বনানী থানার অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিছুটা গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে ওসির গাফিলতি ছিল না। তবে কিছুটা ক্রুটি ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।
সর্বশেষ মে মাসের ৪ থেকে ৬ তারিখ বনানী থানায় দায়িত্বরত দুই কনেস্টবলের সাক্ষ্য নিয়েছে কমিটি। সেইসঙ্গে কমিটি বনানী থানার ওসি ফরমান আলীকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই কমিটিও ইতোমধ্যে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। তাই জমা দেয়া প্রতিবদনে বেশ কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। বনানী থানার ওসি বিভিন্ন অভিযোগের মৌখিক ও লিখিত জবাব দিয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, ওসি ৪ মে ও ৫ মে অভিযোগকারীদের মামলা গ্রহণ করেননি। ৬ মে বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অভিযোগকারী দুই ছাত্রীকে থানায় বসিয়ে রাখেন। রাত ৯টার পর গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ থানায় যান। কেন একজন অভিযোগকারীকে দুই দিন ধরে থানায় হয়রানি করা হচ্ছে- অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের এমন প্রশ্নের মুখে ওসি মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ওই দিন রাত ১০টায় ওসি থানায় মামলা গ্রহণ করেন বলে তদন্ত কমিটি তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে।
গত ২৮ মার্চ বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর মাধ্যমে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এরপর অভিযুক্তরা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে।
যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ, ই-মেকার্স বাংলাদেশের মালিক নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিম, রেগনাম গ্রুপের পরিচালক সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে আসামী করে একজন ছাত্রী মামলা করেন।
১১ মে প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৫ মে রাতে র্যাব এবং ডিবির পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হয় গাড়ি চালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী।
১৭ মে রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার হয় ধর্ষণ মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিম।
প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি উপেক্ষা করে ঘটনার একমাসের বেশি দিন পর ওই দুই তরুণী ৪ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে যান। তবে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে হয়রানী করে বলে অভিযোগ ওঠার ৪৮ ঘণ্টা পর ৬ মে ওই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে।