‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’ খ্যাত নির্মাতা কাওসার চৌধুরীর লালমাটিয়ার বাড়ির আর্কাইভে চুরির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সরকারী অনুদানে প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ এর ফুটেজও ছিল। দামী জিনিসপত্র থাকা স্বত্বেও সেগুলো চুরি না হয়ে এমন চুরিতে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাতা নিজের জীবননাশের আশঙ্কাও করছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে নির্মাতা কাওসার চৌধুরী শনিবার লেখেন, ‘গতরাত (৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে) আনুমানিক ২টা থেকে ৫টার মধ্যে আমার স্ট্রাডিরুমের জানালার গ্রীল ভেঙ্গে নিয়ে গেছে অনেককিছু! এ আমার লালমাটিয়ার বাসা থেকেই এই চুরির ঘটনা ঘটেছে।
আমার ল্যাপটপ, দু’টো হার্ডডিস্ক (একটি ৬-টেরাবাইট, অন্যটি ৮-টেরাবাইট), একটি ভিডিও-ক্যামেরা (সনি এক্স-৭০), দুটি ব্যাগ (একটি ল্যাপটপের ব্যাগ, অন্যটি আমার নিত্যদিনের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ)সহ আরো বেশকিছু জিনিসপত্র বিশেষতঃ ভিডিও-ইকুইপমেন্টস চুরি হয়ে গেছে।
ল্যাপটপের ইন্টার্নাল হার্ড-ড্রাইভে সম্প্রতি শুট করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানের ফুটেজ এবং ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রের ফুটেজ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন প্রফেসর ইমেরিটাসকে স্বর্ণপদক-সম্মানে ভূষিত করে। সেই অনুষ্ঠানের পুরো ফুটেজগুলোই এই ল্যাপটপের দু’টি ইন্টার্নাল ড্রাইভে সঞ্চিত ছিল। সরকারী অনুদানে নির্মাণাধীন ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রামাণ্যচিত্রের বেশকিছু ফুটেজ ওই দু’টি এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভে সঞ্চিত ছিল। আমার নিত্যদিনের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটিতে নগদ টাকা ছিল ৪৫,০০০/= (পঁয়াতাল্লিশ হাজার)। আজ শুক্রবারে আমার কয়েকজন টিম মেম্বারকে কিছু সম্মানি অগ্রীম প্রদান এবং আগামী শুটিং-এর জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্যই ক্যাশ টাকাগুলো ব্যাগে রেখেছিলাম।
সকাল ১১টার দিকে বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে জানানোর সাথে সাথেই উনি একটি টহল টিম পাঠিয়েছিলেন ঘটনাটি সরেজমিনে তদন্ত করতে (ছবি দ্রষ্টব্য)। এস.আই এনামুল-এর নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশের একটি টিম এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আশেপাশের লোকজনকে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করে গেছেন। এই জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে আমাদের বিল্ডিং-এর দারোয়ান এবং আমার বাসার কাজের মহিলাটিও ছিলেন।
পুলিশের পরিদর্শন শেষে পুনরায় ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেছি ফোনে। উনি থানায় একটি ‘এজাহার’ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন। পরিদর্শনকারী এস.আই এনামুল সাহেবের ধারণা- এই ছোট্ট ভাঙ্গা অংশ দিয়ে ‘চোরেরা’ কোন ‘পিচ্চি’ছেলেকে ঢুকিয়ে দিয়েই ‘কম্ম’ সেরেছে! তাঁদের অভিজ্ঞতা নাকি সেটাই বলে। কিন্তু একটি বিষয় আমাকে বেশ আলোড়িত করছে, তা হল, আমার এই স্ট্যাডি-রুমে আরো অনেক মূল্যবান সামগ্রী ছিল, যা ‘চোরেরা’ ইচ্ছে করলে খুব সহজেই নিয়ে যেতে পারতো! কিন্তু তা না করে, আমার ল্যাপটপ এবং হার্ডডিস্কের দিকেই শুধু কেন নজর দিল তারা! ওই দু’টো বস্তুর ভেতরে সঞ্চিত ছিল আমার প্রামাণ্যচিত্র তথা মুক্তিযুদ্ধের একটি পর্বের ইতিহাসের কিছু অংশ; বিশেষতঃ একাত্তরের ‘বধ্যভূমির ফুটেজ’!
জানিনা, এরপরের আক্রমনটি আমার জীবনের ওপরে কী না! তবে এটা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই- ‘এসব করে’ আমার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা, আর আমার লড়াই-সংগ্রাম থেকে আমাকে একচুলও নড়ানো যাবেনা।’
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন চোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন নির্মাতা কাওসার চৌধুরী। মামলা নং ৫৬/ ১১-১৭ তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘চুরি হওয়ার মত অনেক কিছু ছিল। শুধু ল্যাপটপ আর টাকাটা গেল। সেই ল্যাপটপ যাতে দুটো হার্ডডিস্কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথা বধ্যভূমির ফুটেজ আছে। পুলিশ তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে।’
পোস্টে জীবনের ওপর হামলার আশঙ্কা করেছেন, পুলিশি সুরক্ষা চাইবেন কিনা আলাদা করে প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। সুহৃদদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অপূর্ব কুমার বর্মন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমি সন্ধ্যায় দায়িত্ব বুঝে পেয়েছি। তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের ওসি জামালুদ্দিন মীর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। আশা করি অপরাধীরা ধরা পড়বে আমাদের হাতে।’