নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ বলটি কি আবার রাজনৈতিক কোর্টেই পাঠিয়ে দিয়েছেন? বিশেষ করে সরকারের কোর্টে?
গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন বিষয়ে নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। সেখানে তারা নিজেদের অবস্থান জানিয়ে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছে।
তবে, সংলাপের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মঙ্গলবার এক আলোচনায় রাষ্ট্রপতি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংলাপের কথা বলেছেন।
রাজনীতির বিশ্লেষকরা রাষ্ট্রপতির এই তাগিদকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, রাষ্ট্রপতি একদম ঠিক কথাই বলেছেন।
‘কারণ আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন অলঙ্কারিক প্রধান। তিনি কোন বিষয়ে রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু নির্দেশ দিতে পারেন না,’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ হয়তো মনে করেছিল আলোচনার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রপতি একটি সিদ্ধান্তের দিকে যাবেন। ‘কিন্তু তার তেমন কিছু করাটাই বরং অস্বাভাবিক হতো। কারণ, সরাসরি তার কোন সিদ্ধান্ত সংসদীয় বিধিবিধান বহির্ভূত হবে।’
শান্তনু মজুমদার বলেন: রাষ্ট্রপতির বক্তব্য খুবই যৌক্তিক যে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা-নিজেরা তর্ক-বিতর্ক করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর সেটার বাস্তবায়ন করবেন রাষ্ট্রপতি।
একইরকম কথা বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রপতি যে কথাটি বলেছেন সেটি খুবই যৌক্তিক ও ভালো কথা বলেছেন। ‘তিনি বলেছেন যে, আপনারা আলোচনা করুন, তাহলেই অনেক ভালো সিদ্ধান্ত সামনে আসবে। আলোচনা করলেই কেবল ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব। সাংঘর্ষিক অবস্থা থাকবেই, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করতে হলে আলোচনায় বসতেই হবে।’
বিএনপি অনেকদিন ধরেই সংলাপের কথা বলে আসছিল। কিন্তু, গত নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সাড়া না পেয়ে নতুন সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিল সরকার। তাই রাষ্ট্রপতি এখন সরকারকেও সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন: সরকারকে বা অন্য যাকেই ইঙ্গিত দেওয়া হোক না কেন সংলাপ হওয়াটাই মূল কথা।
‘রাষ্ট্রপতি হয়তো বলতে চেয়েছেন, আপনারা মিলঝিল করে এলেই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আসে।’
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বৈঠকে রাষ্ট্রপতিকে নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠন ও ইসিকে শক্তিশালী করতে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর প্রস্তাবসহ কয়েক দফা প্রস্তাব দেয় বিএনপি।