প্রয়াত অবাঙালি ভাষা সংগ্রামী, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র কাহিনীকার জয়নাল আবেদীনকে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজটোয়েন্টিফোর’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নঈম নিজাম।
লিভার সিরোসিসে ভুগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জয়নাল আবেদীন।
স্ট্যাস্টাসে তিনি লিখেছেন, ‘প্রবীন সাংবাদিক জয়নুল আবেদীনকে জানি অনেক দিন থেকে। ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ২০১১ সালের শেষ থেকে। আমি তখন উত্তরায় থাকতাম। সম্পাদকের চেয়ার থেকে বিভিন্ন মানহানি মামলার নিয়মিত আসামী। ঢাকার আদালতে সমন থাকতো। হাজিরা দিতে যেতাম। যানজট এড়াতে সকাল সাড়ে ৭টায় গিয়ে প্রবেশ করতাম প্রেসক্লাবে। ১০টায় আদালতের পথে। প্রেসক্লাবে গিয়ে দেখতাম কেন্টিনে জয়নুল ভাই বসে আছেন একাকি। আমি গিয়ে তার টেবিলে বসতাম। কিছুক্ষণ পর এসে হাজির হতেন কবি হেলাল হাফিজ। চায়ের টেবিলে আড্ডা হতো। কোন কারনে দুপুর বিকেলে আমি ক্লাবে গেলেই জয়নুল ভাই বলতেন, আজ তোমার কি ছিলো এদিকে? বলতাম, মামলা অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোন বৈঠকের কথা। তিনি বলতেন, ওসব না থাকলে তোমাকে দেখা যায় না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রেসক্লাবের ভোট আসলে আমি একটু বেশি যেতাম ক্লাবে। তিনি বলতেন, আগামী কিছু দিন তোমাকে দেখা যাবে। আমি হাসতাম। তিনিও হাসতেন। জয়নুল ভাইর ঠিকানাই ছিলো জাতীয় প্রেসক্লাব। পাসপোর্টেও তাই লেখা ছিলো। কারন এখানেই তিনি থাকতেন। বিয়ে করেননি। সাংবাদিকরাই ছিলো তার পরিবার।’
‘এই মানুষটি সম্পর্কে জানলাম ও ধীরে ধীরে। পড়াশোনা শেষ করেই সাংবাদিকতায় প্রবেশ। পাকিস্তানের ডেইলি জং এর প্রতিনিধি ছিলেন। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্রের কাহিনী লিখেছেন। তার জন্ম ভারতের এলাহাবাদে। ৪৭ সালের বিভক্তিতে এদেশে আসা। পড়াশোনা, সাংবাদিকতা ঢাকায়। ৫২ সালে ঢাকা কলেজে পড়ার সময় উর্দুতে চিকা লিখতেন,রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই। সবাই অবাক হতেন, কে এই লোক? কারন তিনি ছিলেন, উর্দুভাষী । উর্দুভাষী হয়েও বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেছিলেন। এই ভাষা সৈনিকের বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কারনে বঙ্গবন্ধু তাকে পছন্দ করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জয়নুল ভাই দেখা করলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তাকে দেখেই বললেন, খবর কি জয়নুল? তুই ঢাকায়? বাংলাদেশের পাসপোর্ট চান জয়নুল ভাই। কারন উর্দুভাষী যারা তারা পাসপোর্ট পেতেন না তখন। বঙ্গবন্ধু কাগজ নিয়ে লিখলেন, জয়নুলকে পাসপোর্ট দেওয়া হোক…শেখ মজিবুর রহমান। তিনি পাসপোর্ট পেলেন’-লিখেছেন নঈম নিজাম।
এই সাংবাদিক আরও লিখেছেন, ‘৪৭ সালের পর তার পরিবার আসে সৈয়দপুরে। মায়ের কবর সেখানেই। ৭১ সালে এক ভাই পাকিস্তানে চলে গেলেন। জয়নুল ভাই যাননি। তিনি ভালোবাসতেন বাংলাদেশকে। জাতীয় প্রেসক্লাবকে। প্রেসক্লাবের প্রতিটি সদস্যও তাকে পছন্দ করতেন, সম্মান করতেন। কিছু দিন আগে তিনি অসুস্থ হলেন। সবাই প্রার্থনা করতাম জয়নুল ভাই সুস্থ হয়ে ওঠুন। তিনি সুস্থ হলেন না। চলে গেলেন। জয়নুল ভাই ভালো থাকুন যেখানে থাকেন। আপনাকে আমরা মনে রাখবো।’