চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ইউজিসি টিমের কাছে যা জানিয়েছে গোপালগঞ্জের শিক্ষার্থীরা

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে টানা অষ্টম দিনের মতো আন্দোলন চলার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর তদন্ত টিমের মধ্যে নানা অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন খুব শিগগিরই নিরসন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি’র তদন্ত টিমের আহ্বায়ক প্রফেসার ড. মো. আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

কারা কেন শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্যকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ইউজিসির তদন্ত টিম আন্দোলন নিরসনের আশ্বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগের যে দাবি তাদের, তা সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থী শিকদার মাহবুব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের একটাই দাবি, তা হচ্ছে উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সম্মেলন থেকে দেশে ফেরা পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের অনেক ভরসা। আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সমাধান দিবেন।

ইউজিসি’র তদন্ত টিম তাদের সঙ্গে কথা বলেছে কিনা জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমাদের যাবতীয় অভিযোগ শুনেছেন তারা। আমরা লিখিত এবং মৌখিকভাবে তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তারা কথা বলেছেন।

উপাচার্যের পদত্যাগ বিষয়ে ইউজিসি’র টিম আপনাদের কী বলেছে জানতে চাইলে শিকদার মাহবুব বলেন, তারা আমাদের সব অভিযোগ শুনেছেন এবং নথিপত্র নিয়েছেন। তারা ঢাকায় গিয়ে এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ, তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আন্দোলন বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও হাজার হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সবার একই দাবি, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থামাবে না।

তারা ২৪ ঘণ্টা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ছাত্রীও আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। রাতেও যেহেতু তারা কর্মসূচি পালন করছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি চলে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা প্রদান করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। কোন ধরনের নিরাপত্তা কর্মী নাই আমাদের নিরাপত্তায়। আমরা আমাদের সহপাঠী বোনদের নিরাপত্তা দিচ্ছি যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।

এই আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ভূমিকা কী জানতে চাইলে শিকদার মাহবুব বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নাই, তবে অনেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারাও এই আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছেন।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ তাদের সঙ্গে দেখা করে একাত্মতা জানিয়েছেন বলে জানান মাহবুব।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় নানা অভিযোগ এনে গত ১১ সেপ্টেম্বর জিনিয়া নামে এক ছাত্রীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার পর সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য।

এই সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৭টার পর ফাতেমা তুজ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নেয়।

এরপর রাত ৯টার পর শিক্ষার্থীরা ১৪ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে শিক্ষার্থীদের বেধে দেয়া ১৪ দফা দাবি মেনে নেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। দাবি মেনে নেয়ার ৫ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা নতুন করে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

এর আগে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি তার গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিসির পদত্যাগ দাবি করে আজ ৮ম দিনের মত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে যথেষ্ট পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।