চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার ৩৬ মাইল’

দশ বছরের এক বালকের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাড়ি দেওয়া ৩৬ মাইলের গল্প শোনালেন কবি ও সাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। নিজের ফেসবুক পেজে এই লেখাটি পোস্ট দেন তিনি।

সেখানে তিনি লিখেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার ৩৬ মাইল ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাস। তারিখটা মনে নেই। নির্বাচনি প্রচারণা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান উত্তরের অভিযান শুরু করলেন পঞ্চগড় থেকে। সেখান থেকে পড়ন্ত বিকেলে ঠাকুরগাঁ এলেন। ঠাকুরগাঁ বড় মাঠে জনসভা। ঠাকুরগাঁ থানা সহ বালিয়াডাঙি, হরিপুর, রানিশংকৈল থানা মিলিয়ে দিনাজপুর-২ এমএনএ আসন।’

‘আমার আব্বা মোহম্মদ আজিজুর রহমান বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি হিসেবে এই আসনে প্রার্থী। ঠাকুরগাঁ উনার জন্মস্থান। উনার নির্বাচনি প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন। আব্বা সাথে করে আমাকেও নিয়ে গেছেন। আমি তখন দশ বছরের বালক। মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর বাম পাশে আব্বা আর উনাদের মাঝখানের ফাঁকাটায় একটু পিছিয়ে আমি বসে। লক্ষ জনতার গগনবিদারী শ্লোগান, ‘তোমার নেতা, আমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।’ ‘তুমি কে, আমি কে? বাঙালি, বাঙালি।’

লক্ষ জনতাকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু দীপ্ত কণ্ঠে ভাষণ দিলেন। নৌকার প্রার্থী এবং তাঁর সহপাঠি হিসেবে আব্বাকে পরিচয় করিয়ে ভোট চাইলেন।’

এরপর ফেসবুক পোস্টে মুজতবা আহমেদ মুরশেদ লেখেন, জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধুর সাদা টয়োটা গাড়িতে মাগরিবের পর দিনাজপুর রওয়ানা দিলাম। গাড়িতে সামনে সিটে ড্রাইভারের পাশে বাঙালির মুজিব ভাই। পেছনের সিটে মাঝখানে আমি, আমার বামে শুভ্রদাঁড়িতে ঢাকা মাওলানা তর্কবাগিশ, ডান পাশে আব্বা।’

‘বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। উনি আমাকে আগে থেকেই চেনেন। আমাদের দিনাজপুরের বাসায় দেখা হয়েছে। মাওলানা তর্কবাগিশ আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। নাম বল্লাম। আব্বা আমাকে বললেন, উনি তোমার মাওলানা তর্কবাগিশ চাচা।’

এরপর সেই ৩৬ মাইলের বর্ণনা দেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, ‘ঠাকুরগাঁ থেকে ৩৬ মাইল পথ ভেঙে গাড়ি ছুটছে। বঙ্গবন্ধু গুনগুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ভাঁজছেন। মাইল কয়েক পরপরই জনতার ঢেউ। বঙ্গবন্ধুকে ভাষণ দিতেই হবে। গাড়ি থামছে এবং বঙ্গবন্ধু সাদা হ্যাণ্ড মাইক হাতে মিনিট তিন চারেক করে ভাষণ দিচ্ছেন। আবার ছুট।’

‘চলন্ত গাড়িতে বঙ্গবন্ধু, আব্বা, মাওলানা তর্কবাগিশ মাঝে মাঝেই নির্বাচন বিষয়ে কিছু কিছু কথা বিনিময় করছেন। এমন সময় হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে মাওলানা তর্কবাগিশ আমাকে প্রশ্ন করলেন, বড় হয়ে কি হতে চাও?

একমুহূর্তে আমার হয়ে বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন, ‘ও তর্কবাগিশ হবে।’  আমি বাদে উনারা একসাথে হো হো করে দিলখোলা হাসি হেসে নিলেন। মওলানা তর্কবাগিশ বঙ্গবন্ধুর টোকাটুকু উপভোগ করেছেন।’

‘বিষ্ময়কর এই যে, পরবতী সময়ে আমি জাতীয় পর্যায়ে বিতার্কিক হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। 

উনারা কেউ নেই আজ। আমার বুকের ভেতর আছে কেবল প্রতিধ্বনী।’

– মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
১৫ আগষ্ট ২০১৫। ঢাকা।