প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মই হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। তার নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তার জন্ম না হলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেল কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সব অধিকার আন্দোলনের সূচনা করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। অবশ্য এজন্য তাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। বাঙালি যখন ক্ষুধায় কাতর, অনাহারে বিপর্যস্ত তখন বুখা মিছিল করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। এরপর আরো অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানীদের রোষানলে পড়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানিরা তাকে থামানোর জন্য বার বার চেষ্টা করেছে, পারেনি। মামলা দিয়েছে, গেপ্তার করেছে, ফাঁসিতে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানিরা জাতির পিতাকে অনেক লোভ দেখিয়েছেন, কিন্তু তিনি কোন লোভে পা দেননি। তিনি সবসময় বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলে গেছেন। তিনি দেশের স্বার্থে যে ৬ দফা দিয়েছিলেন তা নষ্ট করতেও ষড়যন্ত্র ছিল অনেক, কিন্তু তিনি তার ৬ দফা দাবি থেকে সরে আসেননি। তিনি যেখানে গেছেন সেখানেই মামলা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, যার বীজ তিনি বুনে দেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে। ২৫মার্চ রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাদীনতার ঘোষণা দেন। তিনি গ্রেপ্তার হলেও বাঙালি তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে একটি বিধ্বস্ত দেশ পান। খাবার নেই, পোশাক নেই, মানুষের চিকিৎসা নেই। বঙ্গবন্ধু সবকিছুর ব্যবস্থা করেন, বিদেশ থেকে নার্স ও ডাক্তার এনে দেশের মানুষের চিকিৎসা করান। ধীরে ধীরে সবকিছু গোছাতে শুরু করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু একটি কালো দিবস সবকিছু শেষ করে দেয়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়শীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, তা পেতে আমাদের ৩৭ বছর সময় লেগেছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই অর্জন পেতে মাত্র ৫ বছর সময় লাগতো। কিন্তু যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, দেশের মানুষের ভালো চায়নি, দেশের উন্নয়ন চায়নি তারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির জনকের জন্মদিনেই আমরা এই সুখবর পেয়েছি, এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কী হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়া।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এখন আর আমাদের কেউ ঋণ দিতে ভয় পাবে না। মিথ্যা দুর্নীতির অজুহাতে পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের ঋণ দেয়া হয়নি, এখন আর সেটি হবে না। সামনে ২৬ মার্চ, এবার আমরা অন্যভাবে ২৬ মার্চ পালন করবো, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়ে ২৬ মার্চ পালন করবো এ বছর। একসময় যারা বলতো স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ কী করবে, কিছু করতে পারবে না। আমাদের ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলা হতো, এখন আর কেউ তা বলতে পারবে না।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনে জীবন দিয়ে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেন এবং দরের নেতাকর্মীদেরও সেই প্রতিজ্ঞা করতে বলেন।