জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে অনুরোধ করেছে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান কিশোরী।
১৪ বছরের মাশকুরা তাবাসসুম তাথৈ ট্রুডোর কাছে লেখা এক চিঠিতে এ অনুরোধ করে বলে জানিয়েছে কানাডাভিত্তিক নিউজ পোর্টাল নতুনদেশ.কম।
চিঠিতে জাস্টিন ট্রুডোকে মাশকুরা লিখেছে, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরী কানাডাকে তার নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নূর চৌধুরী টরেন্টোতে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করছে। কানাডার মতো একটি দেশ নূর চৌধুরীর মতো আত্মস্বীকৃত খুনির নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে না।
মাশকুরা আরও লিখেছে, এই খুনিকে বাংলাদেশ ফেরত না পাঠালে পৃথিবীর অনেক মানুষই ভাবতে পারে, যে কোনো মারাত্মক অপরাধ বা যে কাউকে খুন করে কানাডায় চলে এলে তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। বরং নিরাপদে বসবাস করার জন্য কানাডিয়ান সরকার সকল ব্যবস্থা নেবে।
কানাডায় ‘রিফিউজি স্ট্যাটাস’ আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত, এমনকি ডিপোর্টেশন আদেশ মোকাবেলা করার পরেও কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে আইনি কারণে বহিষ্কার করা যাচ্ছে না। অন্য কোনো দেশে ফেরত গেলে ফাঁসির সাজা ভোগ করতে পারেন, এমন কোনো ব্যক্তি কানাডা ভ্রমণে আসলে, নিজে উদ্যোগী হয়ে না ফেরত গেলে, তাকে সরকার জোর করে ফেরত পাঠাতে পারবে না মর্মে ২০০১ সালে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তারই সুফল ভোগ করছে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী।কানাডার অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু মন্ত্রণালয় চারবার নূর চৌধুরীর দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছে।
মাশকুরা লিখেছে, ‘অন্যদের মতো আমিও আশায় বুক বেঁধে আছি, মানবতাবিরোধী অপরাধ করা নূর চৌধুরীকে অচিরেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, যাতে সে তার সাজা ভোগ করতে পারে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে নূর চৌধুরীসহ ১১জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসামিদের অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে এক্ষেত্রেও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি’।
মাশকুরা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তার বাবা পিয়েরে ট্রুডোর কথা মনে করিয়ে লিখেছে, ‘১৯৭০ সালে নির্বাচনের পরে তৎকালীন পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন আপনার বাবা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকি পাকিস্তানে অস্ত্র রপ্তানির ওপরও তিনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
আমরা সবাই জানি, এ বছর কানাডা কনফেডারেশনের ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। আমাদের আশা, বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আপনি ২০১৭ সালকে চিরস্মরণীয় করে রাখবেন।’
মাশকুরা তাবাসসুম তাথৈ বর্তমানে কানাডার ম্যাপল রিজ স্কুলের গ্রেড-৮ এর ছাত্রী এবং স্কুলের ছাত্র সংসদের বর্তমানে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছে। ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট গ্রেড-৪ এর ছাত্রী থাকা অবস্থায় তাথৈ তার বাবা-মার সাথে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পাড়ি জমায়।
২০১৬ সালে সে তার সাবেক স্কুল অটোয়া এমিলি কার মিডল স্কুলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছে। ফরেস্ট ভ্যালি ইলিমেন্টারি স্কুল এ গ্রেড-ফাইভ পড়াকালে সে স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছে। ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করতে চায় তাথৈ।