জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি ইতিহাসের গতিপথকে করেছে সত্য ও সুন্দরের নির্দেশনা, যেখানে ইতিহাসের বিকৃতকে রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে নিপীড়িত, নিঃগৃহীত মানুষের অধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় সাধারণ মানুষের মুক্তির এক ঐতিহাসিক দলিল।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যেনো শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়- পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন, জেল-জুলুমের শিকার স্পষ্ট করে তুলেছে এই বইটি।
আফরোজা নাইচ রিমা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির কাব্য রূপান্তর করে কবিতার স্বাদে এনে দিয়েছেন শক্তিশালী ও ক্ষুরধার ‘শতবর্ষে শত কবিতা’ বইয়ের কাব্যগাঁথা। বঙ্গবন্ধুর সত্যসন্ধানী ও ন্যায়ের পথে লড়াকু চেতনায় গভীর অভিঘাতের সৃষ্টকে করেছেন ছন্দের তালে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থের প্রথম কবিতা জন্মশতবর্ষে মুজিব কবিতায় তারই প্রতিফলন এভাবে ফুটে উঠেছে-
‘এমন কি করেছি যা লেখা যায়’
তোমার অমোঘ বাণীরই পড়ে যাই মায়ায়।
কী সাবলীল, সরলতা তোমার কথায়
বিশ্বদরবারে স্থান নেয় তীক্ষ্ণ কথারই বর্ণচ্ছটায়
‘নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’
এই প্রতিমার আবিষ্কার করতেই কাব্যধারায় নেমেছি।
এ যেন একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ মনের তৎকালীন রাষ্ট্রীয় শোষণ থেকে জনমুক্তির উপায়ের এক আত্মজীবনী। অসাম্প্রদায়িক শেখ মুজিবের মানসপটে সবসময় ভেঙেচুরে একাকার করে দিত, কাঁপিয়ে দিতে চাইতো পাকিস্তান শাসকের ভিত। তাইতো তিনি গড়ে তুললেন বিভিন্ন শান্তি মিশন, জনসেবামূলক কাজ।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের পৃষ্ঠাগুলো তারই জ্বলন্ত স্বাক্ষর। যেটি আফরোজা নাইচ রিমা তুলে ধরেছেন তাঁর অসাম্প্রদায়িক বন্ধু- মুজিব কবিতায় এভাবে—
. . .সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বীজ করলে বপন,
গড়লে তোমার বিভিন্ন শান্তি মিশন।
সেন্ট জেভিয়ার কলেজ থেকে ঠ্যালা চালক,
‘বেকার’ আর ‘ইলিয়ট’ হোটেলে করলে চাল বিতরণ . . .
অসাম্প্রদায়িক বন্ধু তুমি,
হিন্দু-মুসলমান বলে ছিল না কোনো কিছু তোমার অভিধানে।
বঙ্গবন্ধু তখনকার উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও তাঁর বাবা-মায়ের পাননি কোন বাধা, যা শতবর্ষে শত কবিতায় ফুটে উঠেছে ভয়হীন রাজনীতিতে এভাবে-
করেছো রাজনীতি,
পাওনি ভয়-ভীতি।
ছিল না বাধা
সহজ করেছে বাবা।
তাঁর আত্মজীবনী পাঠে বিপ্লবী চেতনা সাধারণ জনমানসে এক নব উদ্যম সঞ্চারের তীব্র প্রয়াস। শতবর্ষে শত কবিতায় যেন তারই প্রবল সুর স্পন্দিত হয়েছে এভাবে মুজিবের বলিষ্ঠ নীতি কবিতায়-
শুধুমাত্র নয় ছাত্র প্রতিষ্ঠান-নির্ভর রাজনীতি,
আপামর জনসাধারণে বিশ্বাসী ছিল তোমার বলিষ্ঠ নীতি।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ‘বাঙ্গাল খেদা’ আন্দোলনের বিরুদ্ধতা,
করেছিল তোমার ও সর্বসাধারণের মুগ্ধতা।
অবশেষে গঠিত হলো পীর মানকী শরীফের আওয়ামী মুসলিম লীগ,
সার্থক হলো সমস্ত জনগণের জাগ্রত দিক।
এককথায়, পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য কাঙ্ক্ষিত বিপ্লবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি নাগরিকের অংশগ্রহগণই ছিল তাঁর একমাত্র প্রত্যাশা। অন্তরে মানবতার মশাল জ্বালিয়ে সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সম্মিলিত প্রতিরোধের আহ্বান এ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। শতবর্ষে শত কবিতায় তা যেন স্পষ্ট দেখা যায় বৈষম্যহীন মুজিব কবিতায়-
. . . একজন মাত্র ছাত্রীর সক্রিয় অংশগ্রহণ,
তুমি করলে তাঁকে স্মরণ।
নয় শুধু রাজনীতিতে,
ছিলে তুমি বৈষম্যহীন সকল ক্ষেত্রে।
নাম তাঁর নাদেরা বেগম,
ছিল সে প্রফেসর মুনীর চৌধুরীর ভগ্নি যেমন।
. . . মুজিবের চিন্তা দ্বিধাহীন,
জীবন দিয়ে করে গেলে চির অমর, বৈষম্যহীন।.. .
জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী মনুষ্যত্ব, বিবেক ও কর্তব্যকে সবার ওপরে স্থান দিয়ে তাঁর স্বচ্ছ বিবেকশক্তির সঠিক কর্তব্যজ্ঞানসম্পন্ন এক মহান ব্যক্তিত্বের জাতির সংকটকালের এক পথ নির্দেশনা।
আফরোজা নাইচ রিমার শতবর্ষে শত কবিতায় উঠে এসেছে এভাবে দুই তিনশত ছাত্র কবিতায়-
বেকার হোস্টেল ও অন্যান্য হোস্টেলে খবর দিয়ে,
জোগাড় করলে, উপস্থিত হলে দুই তিনশত ছাত্র নিয়ে।
….. সার্থক হলো শহীদ সাহেবের সাথে বসে,
দুই তিনশত ছাত্রের এক করে মিশে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দিদশায় আচ্ছন্ন মানুষের অধিকার লঙ্ঘনে অতীব মর্মাহত মুজিব আত্মমর্যাদাহীন, আত্মনিয়ন্ত্রণহীন পরাধীন বাঙালি জাতিকে সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করার প্রয়াসেই বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। জেল জীবন ছিল যেন অনিবার্য। জেলই ছিল তাঁর বাড়িঘর যা পুরো অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ পড়তে পড়তে দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। আফরোজা নাইচ রিমা তাঁর শতবর্ষে শত কবিতায় ছয় নম্বর পৃষ্ঠায় প্রথম জেলে থাকা কবিতায় তুলে ধরেছেন এভাবে-
… গ্রেফতার পরোয়ানা দেখিয়ে নেয়া হলো থানায়,
কোর্ট দারোগার পাহারায় হাতে হাত কড়ায়,
ঠাঁই হলো মেয়ে আসামি না থাকায় মেয়েদের ওয়ার্ডে,
বাড়ি থেকে বিছানা কাপড় এবং খাবার দেবার অনুমতিতে,
সাতদিন পর পেলে জামিন,
প্রথম জেলে থাকার হিসাব হলো হাসিল।
অপরদিকে ৩২ নাম্বার পৃষ্ঠায় জেল-জীবন কবিতায় এভাবেই বেদনার সুর ধ্বনিত হয়েছে–
‘কারাগার থেকে বন্দি মুক্তি কয়জন পেল,
তুমি . . . জেলেই রয়ে গেল. . .
দেশমাতাকে মুক্তির আনন্দে ভাসানোর জন্য তাঁর স্ত্রী রেণু এবং পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকেও দুর্দমনীয়ভাবে নিতেন মুক্তি- ছিল না কোন সংকোচ, আবার কোনো বেদনা। একজন যোগ্য নেতাই হতে পারেন এমন একটি বাঙালি জাতির মুক্তির দূত। যা তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
শতবর্ষে শত কবিতা এ যেনো তারই প্রতিধ্বনি, রেণুর কাছ থেকে বিদায় কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে এভাবে–
. . . রেণু সমস্ত কিছু ঠিক করে দিল,
গম্ভীর স্বরে কাঁদতে লাগলো,
ছোট্ট ছেলেমেয়েরা পড়ছে ঘুমিয়ে,
কি বলবে রেণুকে বুঝতে না পারলে,
শুধু বললে,
যা ভালো,
বুঝে তাই করো. . . .
ঠিক যখন ১৯৫৪ সালের যে মাসে শপথ নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই সময়ে আদমজী জুট মিলে চলছে ষড়যন্ত্র- বাঙালি ও অবাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে ভীষণ দাঙ্গা-হাঙ্গামা যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে।
শতবর্ষে শত কবিতায় আদমজী জুট মিলে ষড়যন্ত্র কবিতায় ছন্দ আনা হয়েছে এভাবে—
. . . অবশেষে উপস্থিত হলে আদমজী জুট মিলে,
শুনলে দাঙ্গা হওয়ার কারণ তাদের কাছ থেকে মিলে।
স্বাধীন সত্তা ও অস্তিত্বে মুক্তি নিয়ে জন্মালেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কেন পরাধীন? এই পরাধীনতার অন্তরায়, বৈষম্যগুলো সুযোগ চিহ্নিত করে মুজিব মেলে ধরেছেন মুক্তির বাতিঘর হিসেবে।
মুজিবই একমাত্র সত্যিকারের মুক্তির দূত, যিনি সব সময় দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির উপায় খুঁজেছেন- যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর উপজীব্য হিসেবে প্রস্ফুটিত। আফরোজা নাইচ রিমাও তাঁর শতবর্ষে শত কবিতায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে তুলে ধরেছেন যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই কবিতায় এভাবে–
ঢাকায় ফিরে যোগ দিলে পূর্ব পাকিস্তানে শান্তি কমিটির সভায়,
‘যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই’- এই মহত্তের আশায়. . .
সেপ্টেম্বর মাসের ১৫-১৬ তারিখে খবর এলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতিনিধিরা যোগদান করবে শান্তি সম্মেলনে।
সমস্ত পাকিস্তান থেকে আমন্ত্রিত ৩০ জন হলে,
পূর্ব বাংলার ভাগে মাত্র পাঁচজন ছিলে।
রাজনীতির কবির অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ভেতর দিয়ে শেখ মুজিবকে পাওয়া যায় সার্বিক পাকিস্তানিদের দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে। তিনি স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন শোষক আর শাসনের কড়াঘাত শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, ছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বত্র বিষবাষ্প ছড়ানো-ছিটানো, তাইতো ছেড়ে দিলেন ল’ পড়া। অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে শতবর্ষে শত কবিতায় ল’ পড়া ছাড়া কবিতায় বোনা হয়েছে এভাবে–
. . . বিভিন্ন জেলায় করলে গঠন আওয়ামী লীগ সংগঠনের
ঘুরে ঘুরে করলে জোরদার এসব প্রতিষ্ঠানের,
থাকলে কিছুদিন বাড়িতে,
ঢাকায় ফিরলেও ছেড়ে দিলে ল’ পড়তে . . .
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনে দিনের পর দিন জন্ম নিয়েছিল পাকিস্তানের বঞ্চনার যন্ত্রণার বীজ। সঙ্গত কারণেই অত্যাচারীর খড়গ থেকে মুক্তি পেতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আর সংগ্রামের ফলে খেটেছেন জেলের মধ্যকার সেলের জীবন। যা অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে শতবর্ষে শত কবিতার ৯৫ নম্বর পৃষ্ঠায় জেলের মধ্যে জেল কবিতায় প্রতিভাত–
. . . হাজী দানেশ সাহেবকে এনে ঢাকা জেলে,
তুমিই প্রথম থাকলে সেলে,
‘জেলের মধ্যে জেল,
তাকেই বলে সেল।’ . . .
পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ধর্মের সত্য, সুন্দর ও উদারতার দিকটা খুবই রসাত্মকভাবে তুলে ধরেছেন, যা আবদ্ধ হয়েছে শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থেহক সাহেবের জিকির কবিতায়–
. . .হক সাহেব শুরু করেলন নতুন উৎপাত,
জিকির করতেন বারোটার পর রাত। . . .
বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন দেশের জনগোষ্ঠীকে এক আদর্শে সমবেত করা না গেলে হায়েনা পাকিস্তানিদের হাত থেকে আদৌ মুক্তি সম্ভব নয়। তাই মুক্তির আদর্শের সলতের দিকে এগিয়ে আসার জন্য আপামর সব শ্রেণি পেশার মানুষকে মনুষ্যত্বের আলো জ্বালিয়ে একই কাতারে দাঁড়নোর আহ্বান জানিয়েছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে; যা শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থে ভিসির বাড়ির উঠান দখল কবিতায় ফুটে উঠেছে এভাবে–
. . . আইন ক্লাসের ছাত্রদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো ফল না পাওয়ায় অব্যাহতিতে,
১৮ এপ্রিল ছাত্র শোভাযাত্রায় ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়িতে।. . .
পাকিস্তানিদের বর্বরতার বিরুদ্ধে একজন আটপৌরে মুজিব যেন গোটা বাঙালির বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর- যাঁর কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন মুজিব। ‘আমি মন্ত্রিত্ব চাই না’ বলতে একটুও সময় নেননি। অসমাপ্ত আত্মজীবনী আসলেই কি অসমাপ্ত! নাকি ভবিষ্যত প্রজন্মের অন্যায়ের প্রতিবাদের শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণার এক বাস্তব ও জ্বলজ্বলে নক্ষত্রসম মানব। শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থটি একটুখানি হলেও কি সিন্ধুর মধ্যে বিন্দু!
বাঙালি জাতির দুর্দশা মোচনে একের পর এক জেলে জীবন কাটিয়ে ভয়ংকর সুন্দরভাবে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মহিমাগুলো উজ্জীবিত হয়ে আছে। শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থে মুজিবের সুতা কাটা কবিতাটি যেনো তারই প্রতিফলন–
. . . ঢাকা জেলে বসে সুতা কাটতে,
কী যে মজা করে নিবিষ্ট চিত্তে কাজটা করতে। . . .
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে আফরোজা নাইচ রিমার শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থটির এক একটি কবিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন্ত আত্মজীবনীর নব বিশ্লেষণী ভাবনাচিন্তা, তাঁর নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশ, সঙ্গে প্রতিটি শব্দই আত্মজীবনীকে নব ধারায় বর্তমান প্রজন্মকে চিনিয়ে দেওয়া। কবিতা সংক্রান্ত তথ্য, তত্ব্গ, রস, প্রস্তুতি-পর্ব প্রকাশ, সংকলন, গঠন, পাঠান্তর, প্রকরণ সবই যেনো এক সীমার মাঝে অসীম বঙ্গবন্ধুকে ছন্দের স্বাদে শব্দ গাঁথুনির নব প্রচ্ছদপটে সাদা পৃষ্ঠার কালো কালির বুনন- যা কাব্যিক সৌন্দর্যে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশ পেয়েছে- একইভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের এই মহালগ্নে মানিয়ে গেছে বইটির নামকরণেও।
শুধু নির্মোহভাবে একটা আদর্শ, একটা পতাকা, একটা দেশ; দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যে কবি ঊর্ধ্বে গিয়েছেন সকল নীতির, সকল দেশের, সকল কবির- সেই রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বক্তব্য ও তথ্য অবলম্বনে আফরোজা নাইচ রিমা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শত কবিতা লিখেছেন এবং সে কবিতাসমূহ এক মলাটে আটকে রাখার উদ্দেশ্যে শতবর্ষে শত কবিতা নামে বইটির আত্মপ্রকাশও বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মুক্তির আনন্দ; যেমনটা শেষ হয়েছে বইটির মুক্তির আনন্দ নামক কবিতার মধ্য দিয়ে–
… চলে গেলে গোপালগঞ্জে,
তোমার আব্বাকে দেখে কিছুটা শান্ত হলে,
তোমাকে দেখে বাবা বেজায় খুশি,
এ যেন জীবনের আরেক সত্যিকারের মুক্তি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবহেলিত, নিরন্ন, নিষ্পেষিত, শোষিত মানুষের মননে জ্বালিয়েছে আত্মদর্শী চেতনার অবিনাশী শিখা। বঙ্গবন্ধু বাঙালির জীবনে গণজাগরণ, একটি ইতিহাস ও একজন মহান অবিস্মরণীয় আত্মজীবনী-আফরোজা নাইচ রিমা’র শতবর্ষে শত কবিতা গ্রন্থটিও ‘ইতিহাস ও কবিতাপ্রেমী মানুষের কাছে হতে পারে এক সমৃদ্ধ সংগ্রহ।’