ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে জাতীয় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বক্তব্যকে “আপত্তিকর মন্তব্য” উল্লেখ করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন একজন আইনজীবী।
রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বি এম সুলতান মাহমুদ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে খায়রুল হককে এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
এ প্রসঙ্গে সুলতান মাহমুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘গত ৯ আগস্ট বিচারপতি খায়রুল হক আইন কমিশনে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি প্রধান বিচারপতি ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।
“তাই আমি এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে এবং জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।’’
ওইদিন আইন কমিশনে দেয়া বক্তব্যে বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ভুল করলে কোথায় যাবো? ষোড়শ সংশোধনীর রায় পড়ে মনে হয়েছে এ দেশ জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হয়ে গেছে, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ আর থাকছে না।
“ওই রায়ে পার্লামেন্ট মেম্বারদের ইমম্যচিউর বলা হয়েছে। যেটা এখানে বলার কোন দরকার ছিল না।”
এরপরের দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রায় একই ধরণের কথা বলেন।
রায়ে প্রধান বিচারপতি সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির রায় যুক্তিপূর্ণ নয়, আবেগ ও বিদ্বেষপ্রসূত। যেসব যুক্তিতে ওই সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে; তা গ্রহণযোগ্য নয়।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়।
তবে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।
ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। গত ৮ মে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের উপর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে আপিল বিভাগে মতামত উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০জন বিজ্ঞ আইনজীবী।
গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আপিল খারিজের ওই রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল থাকে।
১ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় । সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায় প্রকাশ করা হয়।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের যে সংশোধন আনা হয় তা সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে রায়ে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।