তিন মাসের বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ঘেরাও করেছে পোশাক শ্রমিকরা।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে গাজীপুর কোনাবাড়ির নিউ টাউন নীটওয়্যার কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের একটি মিছিল বাংলামোটর প্লানার্স টাওয়ার সামনে ও পেছনে অবস্থান নেয়। ওই ভবনের ৪র্থ তলায় বিকেএমইএর ঢাকা অফিস।
বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া, বকেয়া তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা, কারখানা বন্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনা ও বিনা কারণে শ্রমিকদের ছাঁটাই, জুলুম, নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিকেএমইএ অফিস ঘেরাও করে তারা বিক্ষোভ মিছিল করছে।
শ্রমিকরা জানায়, গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাস ধরে কারখানা মালিক বেতন দিচ্ছে না। বেশ কয়েকবার তারিখ নির্ধারণ করার পরও বেতন দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর কোনো নোটিশ ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর পুলিশের হস্তক্ষেপে কারখানা খুলে দেয়া হয়। এখন আবার বন্ধ করে দেয়া হয়।
এমতাবস্থায় চরম বিপদে পড়েছেন ওই কারখানার প্রায় ২ হাজার ২শ শ্রমিক। এর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ১৮শ বাকিরা অস্থায়ী শ্রমিক বলে জানান তারা।
শ্রমিক ও বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ওই কারখানার মালিক কোরীয়ান। দীর্ঘ ২২/২৩ বছর ধরে ওই কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কারখানাটিতে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়।
এর কয়েকদিন আগেও বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকরা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে অবস্থান নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সুয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কালিয়াকৈর উপজেলা সভাপতি আমিনুল ইসলাম।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গত তিন মাসের বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা দিশেহারা। কারখানাও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক। কয়েক দফা বৈঠকের পর শ্রমিকদের বেশ কয়েক বার তারিখ দিয়েও বেতন দেয়নি মালিক। এরপর শ্রমিকরা বিকেএমইএর সাথে যোগাযোগ করেছে।
আমিনুল ইসলাম বলেন: বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা বিকেএমইএ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে।
ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বকেয়া বেতন দাবি করলে মালিক পক্ষের লোকজন শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধমকি দেয়। তিন মাসের বেতন না পেয়ে তারা অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়টি নিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছিল বিকেএমইএর পক্ষ থেকে। যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের একজন হলেন, সংগঠনটির শ্রমিক বিষয়ক সহকারি যুগ্ম সচিব মার এ নুল ইসলাম সৌভিন।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দীর্ঘদিন ধরে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কারখানা চলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে স্থবিরতা দেখা দেয়। এতে বিপত্তি বাধে। এরপর ব্যাংক এলসি বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে মালিক। সেজন্য শ্রমিকদের বেতন আটকা পড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সমঝোতা করার চেষ্টা করছি। তারা বিকেএমইএকে চিঠি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসে করণীয় ঠিক করা হবে।