একুশের বইমেলায় আওয়ামী যুবলীগের একটি স্টল আছে। খবরটা শুনেই ভালো লাগলো। আমাদের রাজনীতিকরা বইপত্র তেমন একটা পড়েন না- এমন একটা কথা প্রচলিত আছে। খবরের কাগজে নিজের খবরটাও তারা ভালো করে পড়েন না। খবরের চেয়ে ছবি ছাপা হলো কী না তা নিয়ে নাকি তাদের উদ্বেগ বেশি থাকে।
এই ধরনের বই বিমুখ সংস্কৃতির যুগে একটি রাজনৈতিক সংগঠন যখন বইমেলায় স্টল নেয় এবং বই বিক্রির আয়োজন করে- তখন উৎসাহ জাগে বই কি! অন্তত একটি মাস এই সংগঠনের নেতা কর্মীরা নিদেনপক্ষে স্টলে যারা থাকবেন, তারা বইয়ের ছোঁয়াছুঁয়ির মধ্যে থাকবেন, তাও কম কি। আমার মনে হয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলোও বইমেলায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।
যুবলীগের স্টলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি অর্ধেক দাম মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মিডিয়াকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মূলত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটি অসমান্য দলিল। রাজনীতি সচেতন, দেশপ্রেমিক যে কোনো মানুষের জন্যই অবশ্য পাঠ্য। সেই বইটির বহুল প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে যুবলীগ অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ করেছে। কিন্তু পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার আগে যুবলীগ নিজ দলের সকল কর্মীদের বইটি পড়া নিশ্চিত করলে আরো ভালো করতো।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক যারা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যারা করেন, তাদেরই তো সবার আগে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’টা পড়া উচিত। কেবল পড়াই নয়, বইয়ের বক্তব্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টাও করা উচিত।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী যারা পড়েছেন, তারা স্বীকার করবেন- রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের জন্য, নেতাদের জন্য সর্বোপরি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আবহ অক্ষুন্ন রাখার চেতনায় সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য অমূল্য নির্দেশনা আছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধুর অসামপ্ত আত্মজীবনীর শিক্ষাকে অনুসরণ করা গেলে আমাদের রাজনীতির চরিত্র অনেকটাই পাল্টে যেতে বাধ্য।
ছাত্রলীগ- যুবলীগকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা অভিযোগ সমালোচনা আছে। তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি- সন্ত্রাসবাদের অভিযোগও আছে। অথচ সেই যুবলীগই কী না নিজেরা এবছর মেলায় ২০টি বই প্রকাশ করে ফেলেছে। সারা বছর প্রকাশনা ব্যবসায় থাকা অনেক বড় প্রকাশনা সংস্থার পক্ষেও এক মেলায় ২০টির মতো বই প্রকাশ সম্ভব হয় না। অথচ একটি রাজনৈতিক সংগঠন তাই করেছে। প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে, বিষয়বস্তু গুণগত মান নিয়ে মিডিয়ায় খোলামেলা আলোচনা হলে যুবলীগ ভিন্ন একটি ভাবমূর্তি পাবে নিঃসন্দেহে।
তার আগে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি যুবলীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর জন্য পড়া বাধ্যতামূলক করা হোক। বিভিন্ন ইউনিটে বইটির উপর পাঠচক্রেরও আয়োজন করা হোক। তাতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা দিক, দর্শন নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার সুযোগ হবে, দলীয় নেতা কর্মীরা সেগুলো আত্মস্থ করারও সুযোগ পাবেন। আর এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠে ছাত্রলীগকে অবশ্যই রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের বিষয়টি না হয় তারাই ভাবলো।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)