ব্যবহারকারীদের জন্য আরও অর্থবহ নিউজ ফিড তৈরির জন্য গতকাল বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন ফেসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। তবে এ খবরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্র্যান্ড এবং বিশেষ করে গণমাধ্যম কোম্পানিগুলোর কপালে ইতোমধ্যেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডে পৌঁছানো বেশ কষ্টকর হবে পেজগুলোর জন্য। এর কারণ হলো নিউজ ফিডে ব্যবসায়িক এবং মিডিয়া পোস্টের পরিমাণ কমিয়ে বন্ধুদের পোস্ট অধিক পরিমাণে দেখানোর কথা ভাবছেন জাকারবার্গ।
ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
বিজ্ঞাপন নির্ভরতা বাড়বে
নিউজ ফিড থেকে ব্যবসায়িক পেজের পোস্ট কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এসব পেজগুলোকে বিজ্ঞাপননির্ভর করতে চাইছে ফেসবুক, এমনটা মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জাকারবার্গ তার পোস্টে অপ্রয়োজনীয় পোস্ট কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে নিউজ ফিড থেকে বিজ্ঞাপন কমবে কিনা, সে ব্যাপারে কিন্তু কিছু জানাননি তিনি।
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। শুধু মার্কেটিং কনটেন্ট তৈরি করে আগের মতো সাড়া না পেলে বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্য হবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফেসবুক নির্ভর মিডিয়া কোম্পানিগুলোর জন্য চিন্তার কথা
বর্তমানে অনেক অনলাইন মিডিয়া রয়েছে যারা পাঠক কিংবা অডিয়েন্সের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেসবুক নির্ভর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির জনপ্রিয়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছোট বড় আরও অনেক মিডিয়া আত্মপ্রকাশ করেছে অল্প সময়ের মধ্যেই। বিভিন্ন ভাইরাল কনটেন্টের মাধ্যমেই ফেসবুক থেকেই বিপুল সংখ্যক অডিয়েন্সের কাছে বেশ সহজেই পৌঁছানো সম্ভব ছিল।
তবে জাকারবার্গের এই ঘোষণার আগ থেকেই কিছুদিন ধরেই ফেসবুক পোস্টে অংশগ্রহণ কমে আসছে বলে জানিয়েছে অনেক মিডিয়া কোম্পানি। বিশেষ করে এক্সপ্লোর ফিড চালুর পর থেকে বিভিন্ন পোস্টের অরগানিক এনগেজমেন্ট উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, এ কথা বলছে অনেক ওয়েব পাবলিশারই।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ভাইস মিডিয়ার গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ এডিটর ডেরেক মেড মনে করেন, ফেসবুকের এই সিদ্ধান্তের কারণে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মিডিয়া। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, আধিপত্য বিস্তারের পর থেকে প্রথমবারের মতো অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ার ভয়ে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পুনর্গঠন করছে।
তবে ডিজি ডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউজ ফিডে খবর কিংবা অন্যান্য ওয়েব কনটেন্ট দেখানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন উপায় অবলম্বন করবে ফেসবুক। সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কোম্পানির পেজ থেকে দেখানোর পরিবর্তে বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ যদি সেটি শেয়ার করে কিংবা তাতে কমেন্ট করে, সেক্ষেত্রেই নিউজ ফিডে তুলে ধরা হবে।
এর বাইরে নামকরা মিডিয়াগুলোর পোস্ট নিয়মিতভাবেই নিউজ ফিডে দেখানোর কথাও জানিয়েছে ফেসবুক। তবে এই ‘নামকরা মিডিয়া’ কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
কনজ্যুমার নিউজ অ্যান্ড বিজনেস চ্যানেল (সিএনবিসি)’র টেকনোলজি প্রডাক্ট এডিটর টড হ্যাসেলটন এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন: স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খবর পড়ার জন্য আমাদের এমন কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নির্ভর করা উচিত নয় যেটি বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে যুক্ত থাকার জন্যই গড়ে উঠেছে।
এর একাধিক কারণ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি, ‘প্রথমত, সত্য খবর এবং ভুয়া খবর আলাদা করার ক্ষেত্রে এরই মাঝে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে ফেসবুক। দ্বিতীয়ত, খবরকেও বিজনেস মডেল হিসেবে ব্যবহার করছে ফেসবুক। জাকারবার্গের এ ঘোষণা দেওয়ার পর আজ সকালেই শেয়ারের দাম প্রায় ৬.১ শতাংশ পড়ে গিয়েছে।’
চিন্তিত ফেসবুক নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো
ফেসবুকের এ সিদ্ধান্তকে ‘গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া’র মতো অবস্থার সাথেও তুলনা করছেন অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তারা বলছেন, ফেসবুক অনেক দিন ধরেই তাদের উৎসাহিত করে আসছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিকে কেন্দ্র করে অডিয়েন্স তৈরি করতে। এজন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করছিল ফেসবুক। লাইভ স্ট্রিমিং শো কিংবা ফেসবুক ওয়াচের জন্য সিরিজ তৈরি করা, অনেক ক্ষেত্রেই এসবের জন্য অর্থও পরিশোধ করেছে ফেসবুক। এমন উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই এখানে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে।
তবে নিউজ ফিডের এ পরিবর্তন মানসম্পন্ন কনটেন্টের উপর তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছে বাজফিড, ফিনান্সিয়াল টাইমস এবং গ্রুপ নাইন মিডিয়ার মতো বড় কোম্পানিগুলো। গ্রুপ নাইন মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন লরার বলেন: পাবলিশারদের সাথে এটা কোনো যুদ্ধ নয়। মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে আমরাই জিতব।