সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণা করে একটি চক্র গত দুই বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে পল্লবী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগ অনলাইন প্রতারণার অভিযোগে রাজধানী থেকে দুইজন নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বুধবার রাত ১০ টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তাররা হচ্ছেন নাম, অ্যালবার্ট ইকেচুকু ওরফে ইয, ওকে চুকু ওরফে চুকওয়ামা এবং বাংলাদেশি মোছা. নুপুর খাতুন।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিসহ বিভিন্ন ডিজিটাল আলামত ও মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ এবং প্রচুর ব্যাংকের স্লিপ উদ্ধার করা হয়।
সাইবার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার অ্যালবার্ট প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষকে ফেইক আইডি থেকে অপরিচিতদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাত, তারপর টার্গেট ব্যক্তি যখন ফেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতো তখন তার সাথে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতো।
এরপর নিজেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিক বলে পরিচয় দিতো। এক সময় অনেক ম্যাসেজ আদান প্রদান করে ভালো ও ঘনিষ্ট বন্ধু হতো। একপর্যায়ে বলতো বন্ধু আমি তোমার জন্য কিছু গিফট পাঠাতে চাই, তোমাকে গ্রহণ করতে হবে কারণ তুমি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। গিফট পাঠানো কথা বলে কৌশলে তার কাছ থেকে ই-মেইল এড্রেস এবং নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতো। তারপর কয়েক দিন পর ভুয়া গিফটের ছবি তুলে তার ম্যাসেঞ্জারে ছবি পাঠিয়ে বলতো, বন্ধু তোমাকে একটি পার্সেল প্রেরণ করেছি তুমি ঢাকা বিমান বন্দর থেকে গ্রহণ করো।
সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তার নুপুর কাস্টমস অফিসার সালমা বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করতো। ফোনে সে বলতো, স্যার আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে, আমরা আপনার ঠিকানা যাচাই করার জন্য ফোন করেছি। আপনার ঠিকানা মিলিয়ে নেন, তারপর বলতো স্যার আপনার ঠিকানায় পার্সেলটি পৌছে যাবে। তারপর কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে বলতো স্যার আমরা আপনার পার্সেলটি স্ক্যান করে অনেক ডলার ও সোনা পেয়েছি, এগুলো অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছে, এগুলো বৈধ করতে হলে আপনাকে ডলার ও সোনার জন্য সরকারী ট্যাক্স বাবদ টাকা জমা দিতে হবে। আর যদি টাকা জমা না করেন তাহলে মানিলন্ডারিং মামলা হয়ে যাবে বলে ভয় দেখাত এবং ভিকটিমকে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিতো টাকা প্রেরণের জন্য।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার ওকেচুকুর প্রধান কাজ ছিল আলবার্টকে মোবাইল সিম সরবরাহ করা। তাছাড়া বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে আলবার্টের মত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত এবং আলবার্টকে সরবরাহ করত। সে নুপুরকে সকল প্রকার সহযোগিতা করতো। এই চক্রটি গত দুই বছরে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নিয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লবী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।