যুক্তরাষ্ট্রে একটি সামাজিক আন্দোলন প্রচেষ্টাকে পুঁজি করে টাকা কামাতে ফেসবুকের মাধ্যমে করা প্রতারণা চেষ্টার কারণে সিএনএন-এর শিরোনামে বাংলাদেশের নাম এসেছে।
প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যমটির একটি প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইমেন্স মার্চ’ নামের একটি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অসাধু উপায়ে টি-শার্টসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে পকেট ভরতে বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকে শতাধিক ভুয়া পেজ এবং ইভেন্ট খোলা হয়। ভুয়া তারিখ এবং মূল আন্দোলন ও আদর্শের সঙ্গে একেবারেই সংশ্লিষ্টতাহীন এসব পেজ-ইভেন্ট সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
তদন্তে সিএনএন জানতে পারে, বাংলাদেশ থেকে খোলা এসব পেজ ও ইভেন্টের সংখ্যা ১৭’শরও বেশি এবং এদেশ থেকে এসব পেজ ও ইভেন্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
এসবের সঙ্গে বাংলাদেশে ডিজাইনার ও বিপণনকারীদের দু’টি ফেসবুক কমিউনিটির কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। দু’টি ফেসবুক কমিউনিটির একটির নাম ভাইরালস্টাইল বাংলাদেশ এবং আরেকটির নাম টিস্প্রিং।
ফ্লোরিডাভিত্তিক ডিজাইনার্স ও মার্কেটার্স প্ল্যাটফর্ম ভাইরালস্টাইলের বাংলাদেশি প্ল্যাটফর্মের নাম ‘ভাইরালস্টাইল বাংলাদেশ’।
অতি লোভী প্রতারকদের কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ও প্ল্যাটফর্মের নামে নেতিবাচক খবর প্রকাশ হওয়ায় বিব্রত ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভাইরালস্টাইলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাউসার আহমেদ।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের প্ল্যাটফর্মটিকে খুব বাজেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক মাধ্যমকে পণ্যের প্রচার-প্রসারে ব্যবহারের ইতিবাচক পদ্ধতি দেখাই। টার্গেট গ্রাহকদের আবেগ বুঝে পণ্য ডিজাইন উৎসাহিত করি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা করতে গিয়ে নীতিহীনভাবে মিথ্যা-বানোয়াট পেজ-ইভেন্ট খুলে মূল বিষয়টির প্রতি প্রকৃত আগ্রহীদের বিভ্রান্ত করতে পারি। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি কিছু বিপণনকারী এই প্ল্যাটফর্মে থেকে সম্পূর্ণ নেতিবাচক উপায়ে টাকা কামাইয়ের চেষ্টা করেছে।
‘কিছু অসাধু ব্যক্তির অপতৎপরতার দায় ভাইরালস্টাইল বাংলাদেশ নেবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মের সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে এসব অপতৎপরতা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উইমেন্স মার্চকে কেন্দ্র করে যারা নেতিবাচকভাবে ফেক পেজ-ইভেন্ট খুলেছে আমরা অনতিবিলম্বে তাদের সরিয়ে দিচ্ছি। তারা টিশার্ট ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির জন্য যেসব লিংকের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে সেসব ধরে ধরে সম্পূর্ণ রিমুভ করছি। তাদেরকে ব্যান করে দিচ্ছি এবং এ পর্যন্ত ভুয়া পেজ-ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের নামে আসা রেভিনিউও আটকে দিচ্ছি।’
দেশের অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য এ ধরনের হীন চেষ্টা ভালো কিছু বয়ে আনছে না জানিয়ে তিনি বলেন: আমাদের এইখাত থেকে প্রচুর রেভিনিউ আসছে। কিন্তু এরকম প্রতারণামূলক কাজ করে কয়েকজন আসলে নিজেদেরসহ সবার পায়েই কুড়াল মারছে। তারা আমাদের নামকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য আইডি খুলতে দারুণ বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হবে।’
ইতোমধ্যে সিএনএন-এর প্রতিবেদনে উঠে আসা প্রতারণা নিয়ে ইউটিউবে ভাইরালস্টাইল বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কাউসার।
শুধু অনলাইন মার্কেটপ্লেসেই নয়, প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভার্চুয়াল পরিচিতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষক এবং তথ্য-প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ই-জেনারেশনের সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট তামজিদ রহমান।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে যারা ব্যবসায় জড়িত তাদের টার্গেট থাকে চলমান যেকোন ইস্যু। যেমন সিফাত উল্লাহ আলোচনার অন্যতম স্থানে ছিলেন তাই উনার কথাগুলো কোট করে টিশার্ট ব্যবসায়ীরা বেশ ভাল ব্যবসা করেছে। আবার তাকে নিয়ে অ্যাপ ডেভেলপাররা গেম তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়েছে। একইভাবে চলমান যেকোন ইভেন্ট বা ইস্যু অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য লাভের খুব ভাল একটি সুযোগ। কিন্তু এটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করে মূল ব্যাপারকে পরিবর্তন করে ফেলা একেবারেই মেনে নেয়ার মতো নয়।
‘কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য যেন ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় এই বিষয়টি সকল অনলাইন ব্যবসায়ীদের মাথায় রাখতে হবে। অন্যথায় এটি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের লঙ্ঘন হয়ে যাবে। আর এমন একটি ইস্যুতে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ থেকে বিষয়টি ম্যানিপুলেট করা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। যথাযথ কর্তৃপক্ষ চাইলেই এই ব্যাপারে দায়ীদের সনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন: এতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলো। অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবসায়ীদের এই ব্যবসায়িক কৌশলকে অবশ্যই খাটো চোখে দেখবে এবং যারা অনলাইনে বড় পরিসরে বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসায় সম্পৃক্ত রয়েছে তাদের ব্যবসায় বাইরে থেকে অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই শঙ্কা যে অনর্থক নয় তা সিএনএন-এর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনেই দেখা যায়। কারণ ভুল তারিখ, বানোয়াট পেজ-ইভেন্টের এই প্রতারণার সঙ্গে গত মার্কিন নির্বাচনে ফেসবুকে চালানো রাশিয়ার বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার সঙ্গে তেমন অমিল নেই বলে সিএনএন প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে।