চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি, ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১১৫ কোটি ডলার

কয়েক বছর ধীর গতিতে থাকা রেমিটেন্স গতি ফিরে পাচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এসেছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে প্রায় ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৭ লাখ ডলার।

বৃহস্পতিবারে প্রকাশ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর রেমিটেন্স এসেছিল। তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে গেছে। এরপর রেমিটেন্স বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবৈধ লেনদেনের দায়ে বন্ধ করা হয় বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের নাম্বার। লেনদেনের পরিমাণ কমানো হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এসব পদক্ষেপের ফলে রেমিটেন্স বাড়ছে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখা প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রার অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত জানুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল প্রায় ১৩৮ কোটি ডলার। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স কিছুটা কমলেও গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ৯৪ কোটি ৭ লাখ ডলার।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৬ কোটি ডলার। নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেডিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা

ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। সরকারি দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯ লাখ ডলার।

৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, ২৩ কোটি ডলার।

গত জানুয়ারিতে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিটেন্স বেড়েছিল প্রায় ৩৭ শতাংশ। বেশ কয়েক বছর রেমিটেন্সে এত বড় অঙ্কের প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রেমিটেন্স এসেছে ৯৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ওই সময় রেমিটেন্স এসেছিল ৮১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধি এবং অবৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানো বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের ফলে রেমিটেন্সে ইতিবাচক প্রবাহ দেখা দিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানান তিনি।

বিগত ৬ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেচিল গত অর্থবছরে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসে। তার আগের অর্থবছরেও (২০১৫-১৬) রেমিটেন্স কমেছিল ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর আগে দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এভাবে রেমিটেন্স কমতে থাকায় নড়েচড়ে বসে সরকার।

রেমিটেন্স কমার কারণ অনুসন্ধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে, দীর্ঘদিন টাকার দর এক জায়গায় স্থিতিশীল থাকায় অবৈধ উপায়ে বেশি অর্থ আসছে। আর এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে সহজে সুবিধাভোগীর কাছে অর্থ পৌঁছে দিচ্ছেন হুন্ডি কারবারিরা। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়।

গত ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহার করে হুন্ডি তৎপরতা রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান। অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।