চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ফেড রিজার্ভ-সুইফট নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য ঠিক?

কার বক্তব্য ঠিক? ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক যে হ্যাকিং এর কথা অস্বীকার করছে সেটা ঠিক আছে? নাকি হ্যাকিং এর মাধ্যমে জালিয়াতির যে অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক
এনেছে সেটা ঠিক? এমনকি সুইফটও বলেছে, হ্যাকিং এর সুযোগ নেই। কিন্তু, অতীত
সাক্ষ্য দেয় যে আগেও হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমান ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক দায়িত্ব এড়াতে তাদের সিস্টেম হ্যাক হওয়ার কথা অস্বীকার করলেও ইতিহাস বলছে তারা অতীতেও জালিয়াতি বা হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে।

জালিয়াতির ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক দাবি করেছে, আজ পর্যন্ত তাদের ব্যাংকে এ ধরনের কোনো ঘটনার প্রমাণ নেই এবং এ ধরনের ঘটনার সাথে তারা আপোষও করে না। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে, ফেডারেল ব্যাংকে এর আগেও এমন জালিয়াতি বা হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটেছে।

এমনকি ব্যাংকের গোপন নথি বাইরে পাচার করা হয়েছে এবং সেই অভিযোগে দুজনকে জেল খাটার পাশাপাশি জরিমানাও গুণতে হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওই ব্যাংকের দায়-দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনে মামলা করবে বাংলাদেশ।

তবে, সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, আপাততঃ খোয়া যাওয়ার অর্থ ফেরত পেতে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হ্যাকাররা ওই অর্থ ফিলিপাইনে স্থানান্তর করেছে নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। তারা ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল-এএমএলসি’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

খোয়া যাওয়া অর্থের একাংশ এরইমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাকি টাকার গন্তব্য সনাক্ত করে তা ফেরত আনার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) ফিলিপাইনের এন্টি-মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখি চেষ্টার মধ্যেই অবশ্য মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক তাদের সিস্টেমে কোনো রকম হ্যাকিং এবং জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের কথা অস্বীকার করছে। ব্যাংকের প্রধান উইলিয়াম ডাবলি হ্যাকিং এর কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

ব্যাংকটিতে ২৫০টির বেশি দেশ এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

ফেডারেল ব্যাংকের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া পেরিয়েস্ট বলেন, ‘পেমেন্ট ইস্যুতে আমাদের ব্যাংকে আজ পর্যন্ত জালিয়াতির কোনো প্রমাণ নেই এবং এ ধরনের কোনো ঘটনার সাথে আপোস করা হয়েছে তারও কোনো প্রমাণ নেই।’

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জালিয়াতির যে কথা জানিয়েছে সে বিষয়ে ফেডারেল ব্যাংকের মুখাপাত্র আন্দ্রেয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দাবি মতো এই ঘটনার আগে থেকে তাদের সাথে আমরা কাজ করে আসছি, আগামীতেও করবো এবং এ ব্যাপারে আমারা তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা করবো।’

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল ব্যাংকের পাল্টাপাল্টি দাবির পর এ বিষয়ে কথা বলেছে আন্তঃব্যাংক নিরাপদ মেসেজিং সেবা প্রতিষ্ঠান সুইফট। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল ব্যাংকের আদান-প্রদানেও এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে। সুইফটের মুখপাত্র নাতাসা ডি তেরান ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘সুইফট ব্যক্তিগতভাবে কারো সাথে কোনো কথা বলে না বা মন্তব্য করে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা এটা নিশ্চিত করতে পারি।’

তবে সুইফটের নেটওয়ার্কে হ্যাকিং এর মতো ঘটনা ঘটেছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি বলে জানান নাতাসা।

ফেডারেল ব্যাংকের মুখপাত্র আন্দ্রেয়ার কথার সাথে অবশ্য ইতিহাসের অমিল রয়েছে। ফেডারেল ব্যাংকে এর আগেও হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ব্যাংকের সার্ভার ভেঙে সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য পোস্টিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।

ফেডারেল ব্যাংকের গোপন নথি চুরির দায়ে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল বিনিয়োগ কোম্পানি ও ব্যাংক ফার্ম গোল্ডম্যান স্যাসের সাবেক এক কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হন। ওই অপরাধে একই বছরের মার্চে আটক হওয়া রোহিত বানসালকে ১ লাখ ডলার জরিমানা করে ম্যানহাটন ফেডারেল আদালত। নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, ওই মামলা নিস্পত্তি করতে গোল্ডম্যানকে ৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়।

বানসালের আগে একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন গোল্ডম্যানের আরেক কর্মকর্তা জেসন গ্রুস। তাকে এক বছর জেল ও ৩০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর অর্থ ওই ব্যাংক থেকে নথি বা কোনোকিছু হাতিয়ে নেওয়ার মতো সুযোগ রয়েছে। তবে, শুধু মার্কিন ব্যাংকটিকে অভিযুক্ত না করে ঘরের ভেতর কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটাও খেয়াল করতে বলেছেন তারা।