দলের প্রয়োজনে আমি বোলিং করতেও চাইবো- কথাটা মুশফিকুর রহিমের। বোঝাতে চেয়েছেন, ব্যাটিং-কিপিং-অধিনায়কত্ব একসঙ্গে সামলাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে সেই চাওয়া ঢাল হতে পারেনি। কিপিং গ্লাভস ছাড়তে হয়েছে। গল টেস্টে মুশফিক তাই শুধুই একজন ফিল্ডার। কেমন কাটল ফিল্ডার মুশফিকের প্রথমদিন?
টাইগারদের সাদা পোশাকের অধিনায়ক টস করতে নামার আগে থেকেই জানেন হাতে গ্লাভস থাকবে না। টস হেরে যখন ফিল্ডিংয়ে হাঁটলেন তখন আরো বেশি করেই জানলেন, দেখলেন দৃপ্ত পদক্ষেপে লিটন দাস উইকেটের পেছনে হেঁটে যাচ্ছেন। হাতে গ্লাভস জড়িয়ে দুই মুষ্ঠিতে কয়েকবার ঠুকিয়ে বোলারের দিকে তাকালেন। মুশফিকের তখন কেমন লেগেছিল সেটা জানার উপায় নেই। খুব বেশিকিছু ভাবার কি সময় ছিল তার? তিনি যে অধিনায়ক।
অধিনায়ক মুশফিক আবার এদিন একটি আক্ষেপে পুড়েছেন পরে। সেটি অবশ্য পুরো দল, এমনকি পুরো টাইগার সমর্থকদেরই আক্ষেপ। আক্ষেপের সময়টা লম্বা হয়েছে নো বলে কুশল মেন্ডিসের বেঁচে যাওয়ার পর দেড়শ পেরোনো ইনিংস খেলায়। তার আগে মাঠে ফিল্ডার মুশফিকের ব্যস্ত সময়ই কাটল।
গলে মঙ্গলবার বেশিরভাগ সময় লংলেগ ও লংঅফে ফিল্ডিং করলেন মুশফিক। ছোটাছুটি করলেন বিস্তর। লংঅফে ফিল্ডিংয়ের সময় বারবার হেঁটে গেলেন বোলারদের দিকে। প্রচুর কথা বললেন। লংলেগে ফিল্ডিংয়ের সময়ও বেশ কয়েকবার উইকেটের পেছনের দিকে হেঁটে গেলেন। তবে সেটি লিটনের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ডিপ স্কয়ার লেগেও অনেকটা সময় ফিল্ডিং করেছেন মুশি। অবশ্য দিনভর মিড উইকেট আর এক্সট্রা কাভারে কয়েকবার দাঁড়ালেও স্থায়ী হননি। তবে মাঠে সপ্রতিভ ছিলেন। দিনশেষে মনের মাঝে কি লুকিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন সেটাও জানার কোনো সুযোগ নেই।
তবে এটা জানাই, উইকেটকিপিং ছাড়তে মোটেই ইচ্ছে ছিল না মুশফিকের। গ্লাভস হাতে দৃষ্টিকটু কিছু ভুলে সমালোচনা বেড়েছিল। সেটাই কাল হয়েছে। তাতে আক্ষেপ আছে নিশ্চিতভাবেই। সেটা থাকাও স্বাভাবিক। দীর্ঘ সময়ের অভ্যাস। ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরেই শুরু হয়েছিল। টেস্ট ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার সেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে কিপিং শুরু, খেলেছিলেন ৮০ রানের ইনিংসও। পরে আর অতীতে তাকাতে হয়নি। এবার ১০ বছর পর সেই শ্রীলঙ্কাতেই গ্লাভস হারালেন।
মাঝে মুশফিক ৫২ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র পাঁচবার উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে পারেননি। সেগুলোতে কিপিং হারানোর বিষয় ছিল না। ২০০৫ সালে লর্ডসে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। পরে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বগুড়া টেস্টেও কেবলই ব্যাটসম্যান। আর ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন টেস্টে গ্লাভস হাতে নিতে পারেননি আঙুলের চোটের জেরে। তারপর গলেতেই গ্লাভসছাড়া। মুশফিকের মনের কোণে একটা দীর্ঘশ্বাস প্রতিঘাত হয়ে ফিরবেই।
তবে তিনি যখন পেশাদার একজন ক্রিকেটার সেটি আড়াল করতেও শিখেছেন নিশ্চয়। সেটা না পারলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে যে আক্ষেপে পোড়ার নো বল জুটেছে, তাতেই বিষে বিষক্ষয় হয়ে যাওয়ার কথা। কিপিং ছাড়ার আক্ষেপ চাপা পড়ে যাওয়ার কথা ওই নো বলের আক্ষেপেই।
বোলার ছিলেন শুভাশিস রায়। বোলিংয়ে এসেই উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করেছেন। পরের বলেই কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরানোর রাস্তা খুঁড়েছিলেন। মেন্ডিসের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে গিয়েছিল উইকেটরক্ষক লিটনের গ্লাভসে। টিভি রিপ্লে বলটিকে নো ঘোষণা করায় বেঁচে যান মেন্ডিস। শূন্য রানে আউট হওয়া থেকে বেঁচে যাওয়া সেই মেন্ডিসই পরে অপরাজিত ১৬৬ রানে দিন শেষ করেছেন। গুনারত্নের (৮৫) সঙ্গে ১৯৬ রানের জুটি গড়েছেন। শ্রীলঙ্কাকে ৩২১ রান এনে দিয়েছেন ৪ উইকেটে।
সেই প্রথম বলে ক্যাচ হয়েও বেঁচে যাওয়ায় বাংলাদেশ যে আক্ষেপে পুড়েছে, মুশফিকের গ্লাভস হারানোর আক্ষেপ নিশ্চয় সেটির মত সার্বজনীন নয়। দিন শেষে ফিল্ডার মুশফিক তাই দলেরই প্রতীক। সামনের কোন দিনে হয়তো দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়ে সেটি আরো বেশি করে জানান দেবেন।