ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ফিলিপিনো তরুণী এইমি গ্রাসি মার্ভালিয়াসের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার বলছে: সংগ্রামী ও সাহসী তরুণী এইমির এমন জয় প্রাপ্য ছিল, দেশের মাটিতে আমরা বিদেশি তরুণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে ও সুশাসন দেখাতে পেরেছি।
বাংলাদেশের ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ছেলে সালমানুল ইসলামের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে এইমির পরিচয় হয়। ২০১৪ সালে তাদের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের আইন মোতাবেক ইসলামী শরীয়াহ মেনে বিয়ে করেন তারা দুজন। ২০১৬ সালে এইমি সালমানুলের সঙ্গে দেশে আসলে গ্রামে সালমানুলের প্রথম স্ত্রীর কথা জানতে পারেন। এছাড়াও সালমানুলের একাধিক নারীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে সম্পর্ক ছিন্ন করে তালাক চান এইমি।
ডিএমপি’র ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে এইমি গ্রাসি জানান: ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আমি আবার বাংলাদেশে আসি, তালাকনামা না পাওয়ায় আমাকে ফিলিপাইনে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। আমি নিজেও চাইছিলাম নতুন জীবন শুরু করতে তাই বিয়ের কাবিনের টাকা ও তালাকনামা স্বাক্ষর নিয়ে দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু কাবিনের দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও তালাকনামা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সালমানুল। এমনকি আমাকে মারধরও করা হয়। রাজধানীর মিরপুরে সালমানুলের বাসায় গেলে সেখান থেকে আমাকে একটি হোটেলে নিয়ে আটকে রাখা হয়। প্রায় দশ দিন আটকে রেখে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। পরে আমি সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চট্টগ্রামে পরিচিত এক ফিলিপিনো পরিবারের কাছে চলে যাই।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে পরিচিত ফিলিপিনো পরিবার ও একজন বাংলাদেশি বন্ধুর সহায়তায় এইমি তার সমস্যাটি চট্টগ্রামের খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে তুলে ধরেন। কিন্তু সালমানুল ইসলামের বর্তমান ঠিকানা ঢাকায় হওয়ায় খুলশী থানার ওসি এইমিকে গত ৫ মার্চ ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে পাঠান।
এরপর গত ৬ মার্চ থেকে এইমিকে উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অবস্থান করার ব্যবস্থা করা হয় এবং এ সময় তাকে মানসিক ও আইনী সহায়তা দেয়া হয়।ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এইমির বিষয়ে ফিলিপিনো দূতাবাসের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নুসরাত জাহান মুক্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঢাকায় এসে প্রায় চার মাস ধরে নিজের প্রাপ্য দাবি আদায়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এইমি। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা অনেক চেষ্টার পর সালমানুল ইসলামের সন্ধান পাই।
এরপর অভিযুক্ত স্বামী সালমানুল ইসলাম ও এইমি গ্রাসি মার্ভালিয়াসের উপস্থিতিতে একাধিক বৈঠক হয়। সেখানে তালাকের সঙ্গে কাবিনের দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ফিলিপাইনে ফেরত যেতে বিমান টিকিটের খরচ চান এইমি। কিন্তু এতে অস্বীকৃতি জানায় সালমানুল।
এরপর গত ১৪ মার্চ উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের মধ্যস্থতায় সব অভিযোগ ও দাবি মেনে নিয়ে কাবিনের টাকা বুঝিয়ে দিতে রাজি হয় সালমানুল। কিন্তু টাকা দিতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় চান তিনি। এরপর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এইমিকে ১৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে তার দূতাবাসের সেইফ হোমে পাঠায়।
এইমির এমন জয় প্রাপ্য ছিল জানিয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নুসরাত জাহান বলেন: গত ৩১ মার্চ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ফিলিপাইন দূতাবাসের প্রতিনিধি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধি, কাজী ও পরিবারের অন্যান্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে খোলা তালাকে (স্বামী স্ত্রীর সম্মতিতে স্ত্রীর ইচ্ছায় কার্যকর) সই করেন এবং নিজের কাবিনের টাকা বুঝে নেন।
তিনি বলেন: এইমি আগামী ৬ এপ্রিল ফিলিপাইনে ফিরে যাবে, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে নুসরাত জাহান বলেন: শুধুমাত্র এইমি নয় উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সেবা গ্রহণকারী নারী ও শিশুদের একই কেন্দ্র থেকে পুলিশি সেবা প্রদানের পাশাপাশি আইনগত সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে থাকে। ভিকটিমের ঠিক কি প্রয়োজন সেটা বিবেচনা করে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।