জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পুত্রবধূ মেরিনা শোয়েব আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, গুলিতে তার পেটের চারটি লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা ঠিক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ কর পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টিকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলেই মনে হয়েছে।
গত রোববার রাতে ধানমন্ডি ৯/এ-এর বাসায় একটি কক্ষ থেকে মেরিনা শোয়েবকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, ঘটনার সময় মেরিনার ছেলে-মেয়ে, শাশুড়ি ও দেবর বাসায় ছিলেন। মেরিনার ছেলে ও দেবর ঘরের মধ্যেই ক্রিকেট খেলছিলেন। মেয়ে অন্য ঘরে ছিল আর মেরিনা তার কক্ষে একাই অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তার মেয়ে ঘরে গিয়ে দেখে মেরিনা মাটিতে পড়ে আছেন। আর পাশেই পড়ে আছে একটি পিস্তল। ঘটনার পর মেরিনার মেয়ে ফোন করে তার দাদা ফিরোজ রশীদ ও বাবা শোয়েব রশীদকে ঘটনাটি জানায়। ফোন পেয়ে তারা সবাই ছুটে আসেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
বুধবার ল্যাবএইড হাসপাতালের এজিএম (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) সাইফুর রহমান লেলিন ডাক্তারদের বরাতে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মেরিনা শোয়েব এখন আশঙ্কামুক্ত। আইসিইউ থেকে গতকালই তাকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ কেবিনে শিফট করা হবে।
মেরিনার দেহ থেক গুলি অপসারণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুলি বের করা হয়নি, গুলিটা সামনে থেকেই ঢুকেছে কিন্তু এখনো গুলিটা পিঠে আটকে আছে। এ বিষয়ে ডাক্তারা পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। গুলিতে মেরিনার পেটে চারটা লেয়ার ফুটো হয়ে গিয়েছে, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। এর থেকে যেন কোন ইনফেকশন না হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ল্যাব এইডের চারজন বিশেষজ্ঞ সার্জন (অধ্যাপক শাহাদত হোসেন শেখ, অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান, ডা. সাইফুল্লাহ, ডা. এস এম কিবরিয়া) মিলে সার্জারি করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
মেরিনা রশীদের বাবা সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা একমাত্র মেরিনা নিজেই বলতে পারবে। আমরা চাচ্ছি সে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে সব ঘটনা খুলে বলুক।
তিনি বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন মেরিনার শারিরীক অবস্থা উন্নতির দিকে, গুলিটা থেকে গেলেও কোনো সমস্যা নেই। ডাক্তারটা গুলিটার দিকে পরে মনোযোগ দিবে। তারা বলেছেন ভেতরের ড্যামেজগুলো ঠিক করা হয়েছে, পরে গুলি বের করবে। গুলিটা সামনে থেকে ঢুকে পিঠের পেছনে আধা ইঞ্চি অথবা এক ইঞ্চি আটকে আছে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে সবসময় মেরিনা স্বামীর বাড়ির আত্মীয় স্বজন, শ্বশুর ফিরোজ রশীদ ও স্বামী শোয়েব খোঁজ খবর রাখছেন। পাশাপাশি আমরা এখানে অবস্থান করছি।
মেরিনার বিষয়ে জানতে তার স্বামী শোয়েব ফিরোজের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল্লাহীল কাফী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যার চেষ্টা বলেই মনে হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে। পিস্তলটি কাজী শোয়েব রশীদের নামে লাইসেন্স করা। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি পিস্তলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে। রিপোর্ট পেলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বাসার সিসিটিভির ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন: মেরিনার স্বামী দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আর বাসায় ফিরেছেন ঘটনার খবর শুনে রাত ১০টায়। ঘটনার সময় বাসায় তার ছেলে, মেয়ে, দেবর, শাশুড়ি ও কাজের মেয়ে ছিলেন। আমাদের ধারণা, তিনি নিজেই আত্মহত্যার উদ্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এরপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় জড়িত আছে কিনা।