মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ, এ খবর দিয়ে শুরু হয়েছিলো ২০১৫। ফল উৎপাদনেও এ সময় সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। আবার ইলিশ উৎপাদনকারীদের মধ্যে কেবল বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের নতুন জাতও এসেছে ২০১৫ সালে। খরা, বন্যা এবং লবনাক্ততাসহিষ্ণু ধানের বীজ আনার খবরও জানিয়েছে ইরি।
জাতীয় উৎপাদন জিডিপিতে কৃষির অবদান কমতে কমতে ২০ শতাংশের নীচে চলে গেছে। তাতে কি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে কৃষির গুরুত্ব মোটেও কমেনি। বরং দিনকে দিন কৃষির বৈচিত্র্য এবং উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্য শক্তিশালী করছে সমৃদ্ধ কৃষি অর্থনীতির ভিত। সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষির উপকরণ কৃষকের কাছে সহজে পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই সরকারের। এর ফলও মিলেছে বোরোতে বাম্পার উৎপাদন। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে গতবারের মতো একই রকম উৎপাদন হবে আমনে। শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। কৃষির উপকরণ নিয়ে বড় কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায়নি এখনো। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনের আশা নতুন বছরে। তবে এতো ভালোর পরও নতুন উদ্বেগ, দেশের কৃষি উৎপাদন কি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে?
কৃষি অর্থনীতিবিদ ডক্টর শামসুল আলম বলেন, যেভাবে ভেবেছিলাম সেটা বেড়েছে বটে কিন্তু প্রান্তিকভাবে বাড়েনি। কৃষিতে এখন প্যারাডাইম শিফট প্রয়োজন। আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। কৃষিকে এখন আমাদের হাইটেক কৃষিতে নিতে হবে।
উপকরণ সহায়তার মতো বিশাল অংকের কৃষি ঋণ এবারো কৃষকের পাশে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আতিউর রহমান বলেন, এবার আমরা ১৬ হাজার চারশ কোটি টাকার কৃষিঋণের টার্গেট করেছি এবং তিন মাসেই আঠাশ শতাংশ পূরণ করে ফেলেছি।
কৃষিখাতে ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি ভালো খবর এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও’র কাছ থেকে। ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারে শীর্ষে বাংলাদেশ। আম এবং পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৭ম ও ৮ম। সার্বিকভাবে অবস্থান ২৮তম। ২০২২ সালে মাছ উৎপাদনে যে ৪টি দেশ ভালো করবে তাতে আছে বাংলাদেশের নাম। এফএও’র সহযোগিতায় সবচেয়ে বড় চেইন ওয়ালমার্টে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে এ বছরই। মাছ নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিস বলেছে, যে ১১টি দেশে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় বাংলাদেশ বাদে বাকি সব দেশেই ইলিশের উৎপাদন কমেছে।
এফএও সহকারী মহাপরিচালক কুন্দাভী কারিদিসান বলেন, বাংলাদেশে চালের উৎপাদন তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
বহুমুখী প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে এমন একটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছে ধান গবেষণার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইরি। ইরির বিদায়ী মহাপরিচালক ডক্টর রবার্ট জেইলার বলেন, এখানে খুবই উন্নতি ঘটছে। হয়তো খুব শিঘ্রই নতুন কোনো জাতের ধান উৎপাদন হবে।
২০১৫ সালেই বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জিংক সমৃদ্ধ ধানের নতুন জাত ব্রি-৭২ এর বীজ ছেড়েছে বাজারে। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্ক এড়িয়ে বিটি বেগুন মাঠ পর্যায়ে চাষের অনুমতিও এসেছে এবছরই। চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে দুই দফায় ২০ শতাংশ শুল্ক বসানোও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তারপরও নিম্ন মানের চাল আমদানী অব্যাহত থাকা এবং কৃষক ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়া সরকারকে বিব্রত করেই গেছে। আরেকটি বিব্রতকর ঘটনা ছিলো নিম্ন মানের গম আমদানির অভিযোগ।