বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে প্রায় আটকে যেতে যেতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বাভারিয়ানদের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে কিয়েভের টিকিট নিশ্চিত করেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছিল জিনেদিন জিদানের দল।
‘ভাগ্যের উপর নির্ভর’ করেই ফাইনালে উঠেছে রিয়াল! এমন দাবি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট ক্লাব চেলসির সাবেক তারকা ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের। বিবিসি রেডিও-ফাইভের লাইভ সম্প্রচারের সময় জিদানের কৌশল নিয়ে ক্রিস ওয়্যাডেলের প্রশ্নের জবাবে এমন দাবি করেন ইংলিশদের সাবেক মিডফিল্ডার।
আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ‘ক্লাবের ডিএনএ’তে ছিল দাবি করে জিদান বলেছেন, ‘আমরা শেষ মিনিট পর্যন্ত যুদ্ধে ক্ষান্ত দেই না। বায়ার্নের খেলোয়াড়রা আজ (মঙ্গলবার) রাতে যেভাবে লড়াই চালিয়ে গেছে।’
তবুও যে প্রশ্নটা ডানা মেলছে বিশ্লেষকদের কলামে, রিয়াল ফাইনালে গেছে সৌভাগ্যক্রমে নাকি ইউরোপ সেরার আসরে তাদের অভিজ্ঞতার কারণে?
রিয়ালের জন্য অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক মুহূর্ত ছিল ম্যাচে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বায়ার্নের গোলকিপার স্যাভেন উলিরিচের ‘ক্ষমার অযোগ্য’ ভুলে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করেন করিম বেনজেমা। এরপর টলিসোও এবং টমাস মুলারের জোড়াল শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন কেইলর নাভাস।
ম্যাটস হিউমেলেস ও রবার্ট লেভানডোভস্কি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেন। বায়ার্ন ২২টি শট নিয়েছে রিয়ালের গোল মুখে। যার মধ্যে ১০টি শটই ছিল টার্গেটে। বিপরীতে রিয়াল গোলে শট নিয়েছে সবে তিনটি।
বায়ার্নের ৮টি শট প্রতিহত করে রিয়াল। ম্যাচে মাত্র ৪০% বল দখলে রাখতে পারে তারা। প্রতিপক্ষের ৫৭৭ পাসের বিপরীতে রিয়াল পাস দিয়েছে ৪০১টি। কিন্তু রেকর্ড ১৬তম ফাইনালে যেতে রিয়ালের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল।
বায়ার্নের ১০ শটের বিপরীতে ৩ শটেই দুটি গোল করে রিয়াল। ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ক্রিস ওয়্যাডেল বলছেন, ‘সবকিছুর উপরে প্রকৃত সত্য হল, যদি রিয়ালকে আপনি সুযোগ দেন, তারা সেটা নেবেই।’
কিন্তু রিয়ালের কিছু মূল খেলোয়াড়ের সমালোচনা করে ফাইনালে জিদানের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওয়্যাডেল, ‘রোনালদো মোটেও নিজের মত ছিলেন না, বরং বেনজেমাই বেশি বলের যোগান পেয়েছেন। তবে ফাইনালের শুরু থেকেই গ্যারেথ বেল খেলতে পারতেন। রিয়াল মাদ্রিদ ভালো ভালো খেলোয়াড় পেয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি জিদান আজকের ম্যাচে ব্যালেন্সে ভুল করেছেন। লুকা মদ্রিচ ডান দিকে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে আমি এটা ঠিক মনে করি না। একটা ব্যাপার ঠিক যে, রিয়াল ভালো খেলেনি, কিন্তু দুই লেগে তারা চার গোল ম্যানেজ করেছে।’
আর চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার ল্যাম্পার্ড বলছেন, চলতি মৌসুমে দল হিসাবে রিয়াল ‘নিম্ন স্তরের’। বিটি স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে যে রিয়ালকে দেখেছি, এটা সেই রিয়াল না। কিন্তু আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তারা এটা আবার কিভাবে করল?’
গ্রুপপর্বে খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি রিয়াল। দ্বিতীয় হয়েছিল তারা। গ্রুপের শীর্ষ দল টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে নিতে পারে মাত্র এক পয়েন্ট। তবে সাইপ্রাসের প্রতিপক্ষ অ্যাপোয়েল নিকোশিয়া ও জার্মান দল বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের পরীক্ষা ভালোভাবেই উতরে যায় রিয়াল।
নকআউট পর্বে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী পায় রিয়াল। শেষ ষোলোতে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজিকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ ব্যবধানে হারায়। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালিয়ান প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসকে হারায়। যদিও ৯৭ মিনিটে রোনালদোর পেনাল্টি গোলটি নিয়ে বিতর্কটা হয়তো বহুদিন ধরেই চলবে। ওই পেনাল্টির কারণেই জুভদের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের রাস্তা ‘বন্ধ’ হয়ে যায়।
জিদান অবশ্য বলেছেন, ‘ফাইনালে গেলেও প্রতিটি দলের বিপক্ষেই অনেক ভুগেছে রিয়াল। এটা যদিও আপনার মনের মত হয়নি। তবে ফাইনালে যাওয়ার ব্যাপারটা দারুণ।’
গত মৌসুমে লা লিগা জিতেছিল রিয়াল। কিন্তু এবার তাদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। বার্সেলোনার চেয়ে ১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে তারা। যার কারণে গত রোববারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে বার্সা। এর আগে জানুয়ারিতে রিয়াল বিদায় নেয় স্প্যানিশ কাপ থেকেও।
লা লিগায় অবস্থাটা আরো খারাপ হতে পারতো রিয়ালের। চলতি মৌসুমের শুরুতে টেবিলের শীর্ষস্থানধারীদের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে রেলিগেশনের কাছে চলে গিয়েছিল দলটি। তবে সেই অবস্থা থেকে ফিরে এসে গত মধ্য জানুয়ারির পর মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে রোনালদো-বেলরা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকেও বিদায় নেয়ার শঙ্কায় ছিল রিয়াল। যে কারণে ক্রিসমাসের আগে হয়তো একটা পর্যায়ে নতুন চাকরি খুঁজছিলেন জিদান। সেই অবস্থা থেকে ফিরে আসে তারা। এখন গত পাঁচ আসরের চারনম্বর ফাইনালে জিদানের দল। যার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন তিনবার। কিন্তু এই সময়ে মাত্র একটি করে স্প্যানিশ টাইটেল ও কোপা ডেল রে জেতে মাদ্রিদ রাজারা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সাফল্য সত্ত্বেও, এ টুর্নামেন্টে তাদের পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের লিগ ম্যাচের মতোই হয়েছে। যদিও তাদের ইউরোপিয়ান আসরের ম্যাচগুলো সেরা দলগুলোর বিপক্ষে ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যাচ জয়ের হার ৬৬%। আর লা লিগায় ৬২%।
আড়াই বছর আগে রিয়ালের দায়িত্ব নিয়েছেন জিদান। তার অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে রিয়াল কখনো হারেনি। এই প্রতিযোগিতায় তার সময়ে মাত্র চারটি ম্যাচে হেরেছে। এর দুটি চলতি মৌসুমে, প্রথম বা দ্বিতীয় লেগে (যখন তারা এগিয়ে ছিল) বা গ্রুপ পর্বে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শীর্ষ পাঁচ গোল স্কোরারের দুজনই রিয়ালের বর্তমান দলের।