চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম আবাহনী ও তেরেঙ্গানু এফসি, দুই দলই খেলে ভীষণ গতিময় ফুটবল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাই জমজমাট এক ফাইনালের অপেক্ষায় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের তৃতীয় আসর।
আক্রমণাত্মক দুই দলের ফুটবলাররা, আছে গতিময় সব ফরোয়ার্ড আর শক্তিশালী মাঝমাঠ, যারা গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ভাগ্য। দেখে নেয়া যাক এমন কজনকে যারা আলো কেড়ে হয়ে উঠতে পারেন নায়ক-
জামাল ভূঁইয়া (চ. আবাহনী)
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ কাঁপিয়ে আসার পর থেকে যেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের বৃহস্পতি তুঙ্গে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে। প্রথম দুই ম্যাচেই হয়েছেন সেরা। পেয়েছেন গোলও। স্বাগতিক দলটা যে অনেকটাই জামাল নির্ভর, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে গ্রুপপর্বে মোহনবাগানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে। সেদিন অধিনায়ককে প্রথমার্ধে বিশ্রামে রেখেছিলেন কোচ মারুফুল হক। মাঠের ওই সময়টাতে উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণই গড়তে পারেনি স্বাগতিকরা।
জাতীয় দলে পজিশন হোল্ডিং মিডফিল্ডার হলেও শেখ কামাল টুর্নামেন্টে জামালকে উপরে খেলাচ্ছেন মারুফ। তার সঙ্গে উঠে আসছেন আইভরি কোস্টের মিডফিল্ডার দিদিয়ের চার্লসও। তাতে চট্টগ্রামের আক্রমণে ধার বাড়ছে, বাড়ছে গোলও। নিজের মনমতো ধরে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন জামাল, তার কাছে সঠিকভাবে বলের যোগান পাচ্ছেন সতীর্থরাও। জামাল হয়ে উঠেছেন মারুফুলের মূল হাতিয়ার। প্রতিপক্ষ কোচও আলাদা ছক আঁটছেন জামালকে আটকাতেও। শিরোপার মঞ্চে স্বাভাবিকভাবেই আলো থাকবে তার উপর।
লি টাক (তেরেঙ্গানু এফসি)
২০১৬ সালে কেবল এক মৌসুম লি টাক ঝলক দেখার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবল। দুবছর পর এই ব্রিটিশ মিডফিল্ডার ফিরলেন আরও শাণিত হয়ে। তবে চট্টগ্রামবাসীর কপাল খারাপ, লি টাক এখন খেলেন মালয়েশিয়ান ক্লাবের হয়ে।
প্রথম দুই ম্যাচে গোল পাননি কিন্তু বলের যোগানটা ঠিকই ধরে রেখেছিলেন লি। তৃতীয় ম্যাচে জ্বললেন আরও বেশি করে। তাতে কপাল পোড়ে বসুন্ধরা কিংসের। ব্রিটিশ তারকার হ্যাটট্রিকে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় হয়ে যায় বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়নরা। লি পরের ম্যাচে সেমিতে আবারও করেন হ্যাটট্রিক, এবার কপাল খারাপ কলকাতার জায়ান্ট মোহনবাগানের।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও খানিকটা নীচে এসে বলের দখল নেন লি। চকিতে উঠে আসেন আক্রমণে। তার পা থেকে বলের যোগান পান ব্রুনো সুজুকি, শফিক বিন ইসমাইলদের মতো গতিময় ফরোয়ার্ডরা। বলের যোগান তো আছেই, স্পটকিকেও প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম করছেন লি। ক্যারিয়ারে প্রথমবার টানা দুই হ্যাটট্রিকের মাঝে পাঁচ গোলই করেছেন স্পটকিক থেকে। দুটি ফ্রি-কিক ও তিনটি এসেছে পেনাল্টিতে। লিকে আটকাতে তাই বাড়তি কৌশলের প্রয়োজন পড়ছে চট্টগ্রাম কোচ মারুফুলের। ব্যর্থ হলেই সর্বনাশ।
চিনেদু ম্যাথিউ (চ. আবাহনী)
আরামবাগের হয়ে খেলায় বাংলাদেশের ফুটবলকে ভালোই জানা এ নাইজেরিয়ানের। ধারে চট্টগ্রামে এসেও ধরে রেখেছেন ফর্ম। সেমিতে খানিকটা নীচে নেমে খেলেছেন, ফাইনালেও হয়তো সেটাই করবেন। তবে গোল করতে তাতে অসুবিধা হচ্ছে না। এরইমধ্যে ৪ গোল করে ফেলেছেন। গোকুলমের বিপক্ষে সেমিতে জয়সূচক গোলটিও এসেছে তার হেডই। ফাইনালে জয়ের জন্য ম্যাথিউয়ের দিকেও তাকিয়ে থাকবে চট্টগ্রাম।
দিদিয়ের চার্লস (চ. আবাহনী)
চট্টগ্রামকে ফাইনালে তোলার নায়ক। করেছেন জোড়া গোল। মিডফিল্ডার হলেও গোল করতে যে সমস্যা হয় না সেটা প্রতিপক্ষকে বেশ টের পাইয়ে দিচ্ছেন এ মিডফিল্ডার। ইসরায়েল, ফ্রান্সে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা দিদিয়েরকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন মারুফুল। তার সেরাচারের একজন হলেন দিদিয়ের।
ব্রুনো সুজুকি (তেরেঙ্গানু)
প্রথম ম্যাচে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে করেছেন চার গোল। এরপর আর গোল নেই ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত জাপানী ফরোয়ার্ডের। গোল না পেলেও তার দল যতগুলো স্পটকিক পেয়েছে ডি-বক্সের আশেপাশে, তার অর্ধেক অবদান এ জাপানীর। ভীষণ ছুটতে পারেন। তার গতিরোধ করতে গিয়েই ভুল করে ফেলছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। তাতেই বাজিমাত। ফাইনালে এ ফরোয়ার্ডকে আটকে না পারলে বিপদে পড়বেন জামালরা।
শফিক বিন ইসমাঈল (তেরেঙ্গানু)
ছোটখাটো শরীরের ফরোয়ার্ড, বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসকে। তাকে আটকাতে গিয়ে দুই মিনিটের ব্যবধানে দুবার পেনাল্টি উপহার দেন বসুন্ধরার খেলোয়াড়রা। সেমিতে মোহনবাগানের ডিফেন্ডাররাও তাকে আটকাতে পারেননি, দুজনকে কাটিয়ে ঠিকই গোল করেছিলেন। শফিক ফাইনালেও হতে পারেন চট্টগ্রামের বিপদের কারণ।
মানিক হোসেন মোল্লা (চ. আবাহনী)
জাতীয় দলের খেলোয়াড় নন। নেই বিন্দুমাত্র তারকাখ্যাতি। কিন্তু মারুফুলের চোখে বিশ্বমানের ‘মুভ’ আছে তার পায়ে। মানিকের কারণেই উপরে উঠে খেলতে পারছেন জামাল-দিদিয়েররা। ফাইনালে লি টাককে আটকানোর কঠিন কাজটা করতে হতে পারে মানিককেই। সঙ্গে দিতে হবে উপরে বলের যোগানও। মানিক তার কাজটা ঠিকভাবে সারতে পারলে নির্ভারে নিজেদের দায়িত্ব সামলাতে পারবে দলের আক্রমণভাগ। তাতে বদলে যেতে পারে শিরোপা মঞ্চের আলোর দিশারী।