বিশ্বজুড়ে ১৩ সংখ্যাটিকে আনলাকি ধরা হলেও। দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের জন্য এটি বিশেষ সৌভাগ্যের প্রতীকই। কেননা এবারে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে সেটি তার ১৩ তম বই। আর এই বইয়ের বিষয়টাও তার খুবই পছন্দের।
অবশ্য শুধু তারই না পুরো বাংলাদেশেরই পছন্দের মানুষ মাশরাফি। বইটি সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য, মাশরাফি একজন লিজেন্ড। তার বিষয়ে নানান গল্প মানুষের আগ্রহের জায়গা। তাকে নিয়ে লেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মাঠের মাশরাফিকে আমরা সবাই চিনি। জানি তার মাঠে থাকা আর ফিরে যাওয়ার অনেক ছোট-বড় গল্প। কিন্তু তার প্রবল বৈচিত্রময় একটি ছোটবেলা, দুরন্ত কৈশোর তো আর আমরা কেউই জানি না।
সেসব গল্পই একটু একটু করে জানা যাবে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘মাশরাফি’ বইটি পড়লে।
মাঠের ইনজুরি থেকে শুরু করে ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলা বা পাশের বাড়ির বাগানের গাছ থেকে চুরি করে ফল পেড়ে খাওয়া এসবই নানাভাবে উঠে এসেছে ‘মাশরাফি’ বইটিতে।
বইয়ের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বই পাঠকের হাতে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া এই পুরোটা সময়ই লেখকের মাথা জুড়ে থাকে বই। তাই প্রতিটি বই-ই লেখকের পছন্দের। তবে লেখক বলেন, এবারের বইটিতে যে পরিমাণ কষ্ট করেছি তার ফলাফলও পাচ্ছি। পাঠক মন থেকে নিচ্ছে আমার বইটি। তাই এখন পর্যন্ত মাশরাফিই সবচেয়ে পছন্দের বই।
সময়, কষ্ট, ইচ্ছে তো ছিলোই। সঙ্গে এই বইটি লেখার সঙ্গে নানান ধরনের ঘটনাও জড়িয়ে রয়েছে। তেমন একটি ঘটনাই শেয়ার করলেন লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। বললেন, লেখার সুবিধার্থে একবার মাশরাফির বাড়ি নড়াইলে গেছি। ওরা জানতো আমরা ঈদের আগের দিন নড়াইল যাবো। আমি ভাবলাম একদিন আগেই না হয় যাই। মাশরাফি শহরে থাকলে জনগণের যে বক্তব্য পাবো। সে না থাকলে নিশ্চয়ই ভিন্ন কিছু পাবো।
যথারীতি গিয়ে হোটেলে উঠেছি। সেটা কোনোভাবে জানতে পেরেছেন মাশরাফির বাবা। পরের দিন বাড়িতে যেতেই তার মা বিস্তারিত কিছু না জেনেই, আমরা মাশরাফির বন্ধু এটুকু জেনেই যত্নআত্তি শুরু করে দিলেন। আর ওর বাবা শুরু করলেন বকা, তোমরা এই শহরে এসে হোটেলে থাকছো মানে। যতদিন থাকবে আমার বাসাতেই থাকবে। এখানে ছাড়া কোথাও নয়। তোমাদের জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা। পরের দিনগুলোতে আমরা বুঝলাম তারা শুধু আমাদের জন্য না সবার জন্য এমনই আন্তরিক।
মাশরাফি বইটি শুধুমাত্র যারা খেলাভক্ত তাদের জন্যই না, বরং সব ধরনের পাঠকদের জন্য। যারাই মাশরাফিকে জানতে চান তাদের জন্যই এই বইটি। আর সেটা না হলেও কেউ যদি একটি উপন্যাস হিসেবেও পড়তে শুরু করেন, দেখবেন আনন্দের কমতি হচ্ছে না মোটেও।
মাশরাফিকে নিযে কাজ হলো এখন আরো দুটি বইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। একটি চট্টগ্রামের খান পরিবার নিয়ে এবং অন্যটি সাবেক বেশ কিছু ক্রিকেটারকে নিয়ে। তবে একজন লেখক হিসেবে পাঠকের কাছেও কিছু চাওয়া রয়েছে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
বলেন, আপনারা পড়ুন এবং বই কিনুন। বই কিন্তু একটি পণ্য। আপনারা যদি না কেনেন তাহলে যারা বই লিখে তারা টিকে থাকবে কি করে। লেখালেখি করেই যে তারা টিকে থাকবে সেই সুযোগ তাদের থাকবে না। এজন্য সৈয়দ মুজতবা আলীর কথাটি আবার বলতে চাই, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না। যাদের সামর্থ নেই তাদের কথা ভিন্ন কিন্তু যদি আপনার সামর্থ থেকে থাকে তাহলে খানিকটা মনোযোগ বইয়ের দিকেও দেওয়া দরকার। দেশে অনেক ভালো ভালো বই আছে সেসব পড়াটা আবশ্যক।আপনি বই না কিনেই পড়ছেন মানে লেখক বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকটা সেই সিনেমা পাইরেসির মতোই।
দেশের সাহিত্যকে দেশের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করেন এই লেখক। বলেন, আমরা বেশ কিছু বিদেশী সাহিত্য পড়েছি। সেগুলোর বেশিরভাগই ইংরেজিতে। কখনো কখনো ইংরেজি থেকে বাংলা করাটা। দেশের সাহিত্য ছড়িয়ে দিতেও অনুবাদের বিকল্প নেই। কিন্তু সেজন্য অনুবাদকের মধ্যে সাহিত্যবোধ বা রস থাকতেই হবে। অনুবাদে কখনো পুরোপুরি আবেগ অনুভূতি পাওয়া যায় না। কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কি। বাংলা সাহিত্যেও কিন্তু বিশ্বসেরা হওয়ার উপযোগী লেখা কম নেই।
‘মাশরাফি’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে। পাওয়া যাচ্ছে ২৫৮, ২৫৯ ও ২৬০ নাম্বার স্টলে। দাম ৫০৬ টাকা।