বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে হিন্দি ও বাংলায় ফকির লালন শাহর গান শুনে মুগ্ধ হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনের কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরিদা পারভীন প্রথমে গাইলেন হিন্দিতে অনুবাদ করা ‘মিলন হবে কত দিনে’ ও ‘বাড়ির পাশে আরশীনগর’ আর শেষে বাংলায় ‘সময় গেলে সাধন হবে না’।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব অধ্যাপক মুচকুন্দ দূবে বাংলাদেশে ভারতের হাই-কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় লালনের গানে আকৃষ্ট হন। লালন–সাহিত্যের বিশাল ভান্ডার হিন্দিভাষী মানুষের কাছে উন্মুক্ত করার জন্যে তিনি লালনের ১০৫টি গান হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন। এই বই আর ডিভিডির প্রথম কপি শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীকে উপহার দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য ফরিদা পারভীনের প্রশংসা করার পাশাপাশি অধ্যাপক মুচকুন্দ দূবেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, লালনের গান হিন্দিতে অনুবাদের সুযোগেই লালন শাহর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ তিনি পেয়েছেন। লালন শাহর গান হিন্দিতে অনুবাদের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে।
লালন শাহর সাহিত্যকর্ম বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে উল্লেখ করে তা কোনো জাতি, ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি লালন শাহকে একজন মহান সাধক, কবি ও সমাজ সংস্কারক বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শৈশব থেকেই তিনি লালন শাহর গান এবং দর্শনের সাথে পরিচিত। পরবর্তীতে লালনের চেতনা তাকে সাম্য ও সমাজতন্ত্রের পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িক হিংস্রতার বিপক্ষে সংগ্রামে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যে সব কারণে লালন এখনো প্রাসঙ্গিক, সেগুলো হলো মানবতাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া, অসাম্প্রদায়িক দর্শন ও সমাজে সাম্যের বাণী প্রচার করা। সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতা এখন সভ্যতার বিকাশকে রুদ্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষভাবে আমরা এখন দারিদ্র্য-বোমা, সাম্প্রদায়িকতার বোমা এবং আনবিক বোমার হুমকি মোকাবিলা করে চলেছি। লালনের সাহিত্যকর্ম এবং দর্শনের মাধ্যমে আমরা এই তিন বোমাকে শান্তিপূর্ণভাবে নিস্ক্রিয় করতে পারি। লালনের সাহিত্যকর্ম এবং দর্শন চর্চার মাধ্যমে আমরা সাংস্কৃতিক ঘাটতি পূরণ করতে পারি পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা এবং সামাজিক বৈষম্যও নির্মূল করতে পারি।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুচকুন্দ দূবে, বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীসহ বিশিষ্ট গুণীজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।