রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের হক মোড়ে লেখক-কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের ভাড়া বাসার সামনে পুলিশ ও গণমাধ্যমের গাড়ি। আজ ভোর ৫ টা ৫ মিনিটে স্বাভাবিক পোশাকে, স্বাভাবিকভাবে হেঁটে হক গার্ডেন নামের এই বাসার গেটের বাইরে আসেন তিনি। এর ঠিক ২৪ মিনিট পর ভোর ৫ টা ২৯ মিনিটে তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের মোবাইলফোনে ফরহাদ মজহার নিজেই জানান কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তিনি সেসময় তাকে মেরে ফেলা হতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও জানান বলে ঘনিষ্ঠজনদের দাবি।
এমন অবস্থায় তার পরিবারের কী অবস্থা এবং পুলিশ কী করছে জানতে চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদক যখন হক গার্ডেনের নিচ তলায় তখন লিফটে উঠছেন ফরহাদ মজহারের কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি এখন কোথায় বা আদৌ এটা অপহরণ কিনা তা স্পষ্ট করে বলতে পারলেন না তারা।
আবাসিক ভবনটির ৪র্থ তলার ৪-এবি নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন ফরহাদ মজহার। দরজায় কড়া নাড়তেই সেটি খুলে দিয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। মিডিয়া পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে ঢুকতে চাইলে একজন নারী দরজা পুরোপুরি না খুলেই বলেন,‘আমরা তো মিডিয়াকে আসতে বলিনি।’
এরপর প্রায় ১ ঘণ্টা যাবৎ কয়েকবার ভেতরে ঢুকতে চাইলেও ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর মধ্যে দরজা খুলে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন প্রকাশনা বন্ধ থাকা ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
তার কাছে মজহারের অন্তর্ধান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘এ ব্যাপারে আমিতো কিছু বলতে পারি না, তার পরিবারের সঙ্গেই কথা বলুন।’
এরপর একবার দরজা খুলে গেলে বয়স্ক একজন নারীকে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। তিনি ফরহাদ মজহারের স্ত্রীর বড় বোন বলে পরিচয় দেন। তাকে এই নিখোঁজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পাশে থাকা ব্যক্তিগত সহকারি বলেন, ‘উনি অসুস্থ, এসব কিছু বলতে পারেন না।’
বন্ধ দরজার বাইরে ধোঁয়াশায় থাকা বেশির ভাগ সাংবাদিকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভেতর থেকে জানানো হয় নিচ তলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী বা পরিবারের কেউ কথা বলেনি। নিচ তলার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গৌতম দাস, মোস্তাঈন জহিরসহ তার ঘনিষ্ঠজনেরা।
তারা বলেন,‘সাধারণত তিনি এতো ভোরে বের হয়না। তার এভাবে বের হওয়ার পর ফোনে তার ভয়ার্ত কণ্ঠের কথা বলা এবং মেরে ফেলা হবে এমন কথায় ভীষণ উদ্বিগ্ন ওনার স্ত্রীসহ গোটা পরিবার। তার মতো একজন লেখক-কলামিস্টকে কারা তুলে নিয়ে গেলো তা বের করতে এবং অক্ষতভাবে আপনজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে আমরা সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হয়েছেন তা জানিয়ে আদাবর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাসা থেকে বের হওয়ার পর এই লেখক-কলামিস্টের নিখোঁজ রহস্য সমাধানে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
নিজের কণ্ঠে ‘মুক্তিপণ’ দাবি:
পুলিশের এই উপ কমিশনার আরও বলেন,‘তার স্ত্রীর মোবাইলে তার নাম্বার থেকে ৪ বার ফোন করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা রাখতে বলেছেন তিনি নিজে। ৫ টা ২৯ মিনিটে তার স্ত্রীর নাম্বারে প্রথম কলটি আসে। কেউ তাকে ফোন করে বের হতে বলেছে কিনা তা আমরা যাচাই করে দেখেছি। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বা ভোর রাতে সেরকম কোনো ফোনকল তার নাম্বারে আসেনি।
বাসার গেট থেকে স্বাভাবিকভাবে থেকে বের হওয়ার পর তৈরি হওয়া রহস্য দূর করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ চলছে।’
সিসি ক্যামেরায় ফরহাদ মজহারের বাসা থেকে বের হওয়ার দৃশ্য: