সারাদিন প্রবল উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে কাটানোর পরে রাতের বেলা উদ্ধার করা হয় কলামিস্ট, কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারকে। তার উদ্ধার হওয়ার পরে বিভিন্নজন বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন
ফরহাদ মজহারের অপহরণ ও উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, নিজের অপহরণ ঘটনার বর্ণনায় ডিবি পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মাজহার জানিয়েছেন, তিনি ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন, এসময় একটি মাইক্রোবাসে করে ৪-৫ জন তাকে তুলে নিয়ে যায়।
ব্রিফিংয়ে তিনি আরো জানান, এখনো তার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কারা তাকে তুলল, কেন তুলে নিয়ে গেলো বলে ধারণা করছেন, কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিলো কিনা, সেসব বিষয় তার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে। ৩টা দিকে তাকে আদালতে তোলা হবে। সেখানে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেবেন। জবানবন্দী দেওয়ার পরে তার দেওয়া তথ্যগুলো মিডিয়াকে দেওয়া হবে।
ফরহাদ মজহার ‘পরিকল্পিতভাবেই ভ্রমণ’ করছিলেন
সোমবার দিবাগত রাতে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করার পর খুলনা যশোরের নয়োপাড়া থেকে উদ্ধার হওয়া কলামিস্ট, লেখক, কবি ফরহাদ মজহার ‘পরিকল্পিতভাবেই ভ্রমণ’ করছিলেন বলে ধারণা করেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ। ‘এটা কোন অপহরণ নয়’ বলেও জানান ডিআইজি।
ঢাকার টিকিট কাটেন তিনি নিজেই
অভয়নগর থানা পুলিশ হানিফ পরিবহনের একটি এসি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করার তথ্য নিশ্চিত করেন বলে জানান যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, এরপর র্যাব সদস্যরা তাকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করে।
হানিফ পরিবহনের ৫০৫ নং এসি কোচটি যশোরের মণিহার স্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে। এই গাড়িতে বসেই সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।
তিনি জানান, ফরহাদ মজহার খুলনার শিববাড়ি কাউন্টার থেকে নিজেই ঢাকার টিকিট কাটেন। গাড়িতে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন।
মোবাইলের চার্জার নিতেও ভুলেননি
ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, তাকে অপহৃত মনে হয়নি। একজন সুস্থ মানুষ কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সময় যে অবস্থায় থাকে, ঠিক সেভাবেই উনাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
‘উনার সাথে একটা ব্যাগ আছে। সেই ব্যাগে উনার এক্সট্রা একটা জামা আছে, একটা গেঞ্জি আছে, কিছু টাকা পয়সা আছে, একটা মোবাইল আছে, একটা মোবাইল চার্জারও আছে। অর্থাৎ মোবাইলের চার্জারও নিতে উনি ভুলেননি। উনি পরিকল্পিতভাবেই জার্নি করছেন বলে মনে হলো।’
নিউমার্কেটের গ্রিল হাউজে তিনি নাস্তা করেছেন
খুলনা র্যাব-৬ এর সিইও রফিকুল ইসলাম বলেন, খুলনা নিউমার্কেটের গ্রিল হাউজে তিনি নাস্তা করেছেন। গ্রিল হাউজের মালিকের কাছ থেকে এই তথ্যটা আমরা কনফার্ম করলাম। তখনই আমাদের মাথায় আসলো তাহলে এই ব্যক্তি হয়তো ঢাকাগামী কোন বাসে যেতে পারে।
বাবার কাছে ব্যাগ কোথা থেকে এলো জানি না
খুলনায় উদ্ধার করার পরে ফরহাদ মজহারকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। ঢাকায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আদাবর থানায়। সেখানে তার মেয়ে সম্তলী হক সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ি থেকে তার বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও ফুটেজে তার সঙ্গে কোনো ব্যাগ ছিলো না। সেটা আমরা দেখেছি, সবাই দেখেছে। পরে তার কাছে কোথা থেকে ব্যাগ এলো তা আমরা জানি না।
স্বস্তি যে তিনি জীবিত আছেন
আদাবর থানা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরহাদ মজহারকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বাইরে অপেক্ষমাণ তার স্ত্রী ফরিদা আখতার বলেন, আমি এটাতেই স্বস্তি পেয়েছি যে, তিনি জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। এখন তাকে ছেড়ে দিলে আমরা হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
পুলিশ একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে
ডিবি অফিসের বাইরে অবস্থানরত ফরহাদ মজহারের ঘনিষ্টজন ও বন্ধু গৌতম দাস বলেন, পুলিশ একেক সময় একক রকম তথ্য দিচ্ছে। আদাবর থানায় বললো প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন ছেড়ে দিবে নাকি কি করবে কিছুই জানি না আমরা।
বাবা তো আসামী নয়, ভিকটিম
ডিবি অফিসের বাইরে অপেক্ষমাণ ফরহাদ মজহারের মেয়ে সম্তলী হক বলেন, অনেকক্ষণ সময় পেরিয়ে গেছে। তাকে দেখে যা বুঝলাম তার শারীরিক অবস্থা ভালো না, খুব খারাপ। এখান থেকে ছাড়লেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করবো। আমার বাবা তো আসামী নয়, ভিকটিম। একজন ভিকটিমের সঙ্গে কেন আসামীর মতো আচরণ করা হচ্ছে! পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। মামলা হয়েছে কিনা জানি না।
বাসে উঠেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন তিনি
ফরহাদ মজহারকে বহনকারী হানিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটির সুপার ভাইজার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ফরহাদ মজহার তার বাসের আই-৩ সিটের যাত্রী ছিলেন। তিনি খুলনার শিববাড়ি কাউন্টার থেকে বাসে ওঠেন। বাসে উঠেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। নোয়াপাড়ার কাছাকাছি স্থান থেকে তিনি টিকেট চেক করেন। তার টিকিটে নাম লেখা ছিল মিস্টার গফুর। নোয়াপাড়ায় পৌঁছানোর পর পুলিশ তাকে গাড়ি থামাতে নির্দেশ দেয়। অভয়নগর থানা পুলিশ ফরহাদ মজহারকে বাস থেকে নামিয়ে নেয়। এরপর র্যাব সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়।