সকাল পৌণে ৯টা। সাদা হয়ে নেমেছে বর্ষণ। খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একজন দর্শকও নেই। তবে ইষ্ট গ্যালারিতে ভিজে একাকার তামিম-কায়েস-মুমিনুল-মুশফিকুর-সাকিব-লিটন-সৌম্য-শুভাগত-তাইজুল-জুবায়ের-শহিদ। তাদের ঠিক বা পাশে কাকভেজা টিম-ইন্ডিয়াও।
ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।
ভাবছেন কি পড়ছেন এসব! না, চিন্তার কোনো কারণ নেই। খেলা বন্ধ আছে দেখে বৃষ্টিতে নেমে পড়েনি দুই দল। আসলে ইষ্ট গ্যালারির উপরেই স্টেডিয়ামের ‘অ্যানালগ’ স্কোরবোর্ড। কালো বোর্ডের গায়ে সাদা রঙে লেখা ক্রিকেটারদের নামগুলো বৃষ্টির মধ্যে যেনো আরও বেশি জ্বলজ্বলে। আহ! রোদ উঠলে কতোই না ব্যস্ত হয়ে উঠতো এই বোর্ডটা।
দুর্ভাগ্য ফতুল্লাবাসীর। ৯ বছর পর টেষ্ট ক্রিকেটে ফেরাটা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি। আর আশা করে লাভও নেই। ৫ দিনের একটা টেষ্ট ম্যাচের চার দিনই বাধা হলো প্রকৃতি। পঞ্চম দিনটাও ভেজা-ভেজা। খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে আর যাই হোক অন্তত দুপুর পর্যন্ত ক্রিকেট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। যে কোনো সময়ই আসতে পারে আখেরি ঘোষণা।
দুই পাশের দুই ড্রেসিংরুমে অবস্থান করছে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় দল। আর উল্টো পাশে প্রেসবক্স, কমেন্ট্রিবক্স, প্রডাকশন এবং মিডিয়ার লোকজন। এর বাইরে নিরাপত্তাকর্মী আর পার্কিংয়ে গাড়ির সারি। এক ঝলকে এই ফতুল্লা স্টেডিয়ামের চেহারা।
ফতুল্লার ডায়েরি: ২
মাঠে পানি, খেলা বন্ধ। সরাসরি সম্প্রচারে নেই টেলিভিশন। আর তাই অনির্ধারিত বিরতিতে পরেছেন টিভি কমেন্টেটররা। গুনগুন করতে করতে হেঁটে যাচ্ছিলেন হারশা ভোগলে। তার সাদা শার্টটা ভিজে গেছে বৃষ্টির পানিতে। ব্যালকনিতে ফোনে গেইম খেলতে খেলতে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার জানিয়ে দিলেন চুক্তিবদ্ধ তারা সবাই। স্টার ইন্ডিয়ার বাইরে বাংলাদেশের কোনো টিভির সঙ্গেই কথা বলতে পারবেন না। তাই সাবেক এই ক্রিকেটারের ইন্টারভিউ করার ‘ধান্ধা’ শুরুতেই বাতিল।
তবে বিশ্রামকক্ষে দেখা হয়ে গেলো শ্রীলংকান ধারভাষ্যকার রঞ্জিত ফার্নান্দোর সঙ্গে। আড়াই বছর আগে কলম্বোতে দেওয়া ইন্টারভিউয়ের কথা মনে আছে ষাটোর্ধ্ব এই ভদ্রলোকের। উনি দেখেই অবশ্য চিনতে পারলেন, জানতে চাইলেন হেয়ারস্টাইল চেইঞ্জ হয়েছে কি না।
রঞ্জিতের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সামনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক কমেন্টেটর আতহার আলি খান। আতহার বললেন ক্রিকেট ছাড়া অনেক কিছুই হচ্ছে। যেমন? এক কথায় আতহারের উত্তর: চা-কফি-গল্প-আড্ডা এসবই। হারশা-সঞ্জয়দের মতো আতহার আলি খানেরও চুক্তির বাইরে অন্য টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ।
তবে সেলফি তুলতে তো আর আপত্তি নেই। এটা যখন আতহার জানাচ্ছিলেন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে মোটা গলার কেউ একজন এসে বললেন ‘আরে আতহার ভাই… চলে এলাম’। সবার পরিচিত গলা। তিনি বাংলাদেশের আরেক তুমুল জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফর উল্লাহ শারাফাত। যেখানে দাঁড়ান তিনি ভিড় জমে যায়।
আড্ডায় যোগ দিলেন শারাফাতও। বললেন, খেলা হোক আর না হোক, খেলোয়াড়রা আসুক আর না আসুক, আমাদের কিন্তু আসতেই হয়। জাফর উল্লাহ শারাফাত এমনভাবে কথাগুলো বলছিলেন মনে হলো বেতারেই শুনছি।