চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ফণী’র প্রভাবে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাত, ঘর ভেঙে এবং গাছচাপায় এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অনেকে। এছাড়াও কয়েকশ’ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এর ভয়াবহতা কেটে গেছে। ঝড়টি আরো উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে দুর্বল হবে। রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, ময়মনসিংহ হয়ে ফণী ভারতের মেঘালয়ের দিকে যাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে, সাগর রয়েছে উত্তাল। এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

বরগুনা
বরগুনার পাথরঘাটায় খলিফার হাটে তীব্র ঝড়ে ঘর চাপা পড়ে ২ জন নিহত হয়েছে।

নোয়াখালী
শনিবার ভোর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঝড়ে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে চর আমানউল্লাপুর ইউনিয়নে এক শিশু নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। নিহত শিশুর নাম ইসমাইল হোসেন (২)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নেত্রকোনা, বাগেরহাট
ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ১ জন ও নেত্রকোনায় ২ জন ও বাগেরহাটে ঘর চাপায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।ঘূর্ণিঝড়-ফণী

নিহতরা হলেন- পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের কুর্শাকান্দা গ্রামের আয়াজ আলীর ছেলে আসাদ মিয়া (৫৫), একই উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের আলগীরচর গ্রামের আবদুল হালিমের মেয়ে নুরুন্নাহার (৩০), একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে মুজিবুর (১৭), মিঠামইন উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের বিরামচর গ্রামের গোলাপ মিয়ার ছেলে মহিউদ্দিন (২৩), একই উপজেলার কেওয়াজোড় ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের এবাদ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৭) ও ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কাটুইর গ্রামের রাখেশ দাসের ছেলে রুবেল দাস (২৬)।

চাঁদপুর
ফণীর প্রভাবে চাঁদপুরে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে মেঘনা নদীর পূর্বপাড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়া গেলেও পশ্চিমপাড়ে চরাঞ্চলে শতাধিক বসত ঘর ও বহু গাছপালা ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। তবে এ ঘটনার কোনো হাতহতের খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের শিলারচর, খাসকান্দি, মান্দের বাজার গ্রামে প্রচণ্ড গতির ঝড়ো হাওয়ায় বসতঘরগুলো ভেঙে পড়ে ও গাছপালা তছনছ হয়ে যায়।

আক্রান্ত উপজেলা ও চরাঞ্চলগুলোর লোকজনকে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হজরত আলী বেপারী ও হাইমচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন। তবে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

কুমিল্লা
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে কুমিল্লার ওপর দিয়ে ঝড় সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার গতিতে বয়ে গেছে। সকাল ৭টার পরে ঝড়ের গতি কমে যায়। ঝড়ের কারণে বেশ কয়েকস্থানে গাছপালা পড়ে গেছে। তবে কোনো জানমালের ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

বরিশাল
বরিশালে গতরাত আড়াইটার দিকে ৭৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেলেও শনিবার সকাল থেকে বাতাসের গতিবেগ স্বাভাবিক রয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাতাসের তীব্রতা যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর সর্তকতার কারণে বরিশালে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়-ফণী

ঝালকাঠি
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝালকাঠিতে সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিম্নাঞ্চলে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখে জেলার ৪৯টি সাইক্লোন শেলটারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে তিন হাজার মানুষ। নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ চলাচল বন্ধ
বৈরি আবহাওয়ার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সহ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ করেছে বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, বৈরি আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে লঞ্চ চলাচল এবং শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ৬শ’র বেশি যানবাহন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট মহাসড়কের প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহন সারি ধরে অপেক্ষা করছে।ঘূর্ণিঝড়-ফণী

রোববার বিকেল নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়া পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।