রোমাঞ্চের শুরুটা হয়েছিল সিলেটে। ক্রিকেটে রোমাঞ্চ বলতে যা বোঝায় ব্যাটে-বলে লড়াই জমিয়ে ওঠা, যাতে ভাসতে গ্যালারিতেও উপচে পড়েছিল দর্শকরা। মনে হচ্ছিল হয়ত অন্যরকম এক বিপিএলই পেতে যাচ্ছে পঞ্চম আসর। কিন্তু ঢাকায় এসে সেটি হাওয়া! মাঠের খেলা একপেশেই হচ্ছিল, একটু আধটু যা জমছিল সেটি নিধুয়া পাথার গ্যালারির সামনে। মঙ্গলবার ঢাকা পর্ব শেষ করে বিপিএল নাইয়র গেছে চট্টগ্রামে। যাওয়ার আগে মাঠের লড়াইয়ের সঙ্গে গ্যালারির উপস্থিতির পারদটাও চড়িয়ে গেছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। পয়েন্ট টেবিলেও যে জমেছে খেলা।
সাত দলের পঞ্চম আসরে ৪২টি গ্রুপপর্বের ম্যাচের দেখা মিলবে। ইতিমধ্যে দেখা হয়ে গেছে ২৪টি মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। চট্টগ্রাম পর্বে হবে আরও ১০টি ম্যাচ। ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বের খেলা গড়াতে গড়াতে হয়ত সেরা চারের জন্য দলগুলোর গোছগাছ অনেকটাই ঠিকানা পাবে। সেটি পাওয়ার আগ পর্যন্ত টেবিলের হিসাব-কেতাবে রোমাঞ্চের কমতি থাকছে না। অবশ্য অন্যরকমও হতে পারত। ঢাকায় প্রথম পর্বের শেষদিনের দুটি ম্যাচের ফল উল্টো হলে এভাবে জমত না শীর্ষ চারের হিসাব!
টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগে শুধু কাগজে কলমেই নয়, প্রকৃত শক্তিমত্তার হিসাবেই এগিয়ে রাখা হচ্ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস ও রংপুর রাইডার্সকে। সাকিবের ঢাকা হেরে শুরু করলেও দ্রুতই নামের প্রতি সুবিচার করতে থাকে, সেখানে জিতে শুরু করা মাশরাফীর রংপুর উল্টো যাত্রায় হাঁটছিল। সেই ঢাকাকে হারিয়েই মঙ্গলবার দারুণভাবে টুর্নামেন্টের হিসাব জমিয়ে তুলেছে রাইডার্সরা।
ঢাকা-রংপুরের ম্যাচটি স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছে। গেইল-ম্যাককালামকে দিয়েও দেড়শর আগেই গুটিয়ে গিয়েছিল রাইডার্সরা। সেটি টপকাতে আবার নাভিশ্বাস ধরে রাখতে পারেনি ডায়নামাইটসরা। শেষ ওভারে ঢাকার দরকার ছিল ১০ রান, হাতে ২ উইকেট। ক্রিজে ঝড় তুলতে পারঙ্গম কাইরন পোলার্ড। থিসারা পেরেরা ওভারটায় বাজি জিতে যান। দুই উইকেট তুলে নেয়ার পাশাপাশি দলকে এনে দেন দুই রানের জয়ও।
শেষদিনে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের আরেকটি ম্যাচ দেখা গেছে। দিনের প্রথম ম্যাচে হাতছাড়া হতে বসা ম্যাচে ১৯ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে আরিফুল ২ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন খুলনাকে। যে প্রত্যাশা নিয়ে গ্যালারি টইটম্বুর হয়ে উঠেছিল দর্শকে, সেটির স্বার্থকতা এনেছে দিনের এই দুই ম্যাচ।
তাতে জমে ওঠা পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থেকে বন্দরনগরী পর্ব শুরু করবে রংপুর রাইডার্স। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শক্তিশালী ঢাকা সেখানে ৮ ম্যাচ খেলে ফেলেছে, ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সাকিবরা।
ঢাকার সমান ৯ পয়েন্ট তিনে থাকা খুলনা টাইটানসেরও। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল খেলেছে ৭ ম্যাচ। টানা তিন জয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা সিলেট সিক্সার্স ৮ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে মাশরাফীর রংপুর। ৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে মুশফিকের রাজশাহী কিংস আছে ছয় নম্বরে। সেখানে বন্দরনগরীর দল চিটাগং ভাইকিংস তলানিতে ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে।
চিটাগং পিছিয়ে থাকলেও এখনই তাদের বাতিল করে দেয়া যাচ্ছে না। গ্রুপ পর্বে প্রতিটি দল ১২টি করে ম্যাচ খেলবে। অংশ নেয়া ৭ দলেরই পয়েন্ট গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। এখনো তাই সবার সমানেই থাকছে সমান সুযোগ। আর হিসাবের খাতা যত বেশিদিন পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে, মাঠের রোমাঞ্চে সেটির ছাপ পড়া কল্পনাপ্রসূত কিছু নয়।