প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রক্রিয়া মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য বড় ধরণের ঝুঁকির সৃষ্টি করে থাকে বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে।
আইপেন এবং ইন্টারন্যাশনাল পেলেট ওয়াচ (আইপিডব্লিউ), বাংলাদেশ সহ ৩৫টি দেশের বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) সাথে একত্রিত হয়ে গবেষণা করেছে। গবেষণাটি ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিচালনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল পলুটেন্টস এলিমিনেশন নেটওয়ার্ক (আইপেন) এর সহযোগিতায় এসডো প্রধান কার্যালয়ে ‘প্লাস্টিক টক্সিক কেমিক্যাল প্রব্লেম: এ গ্রয়িং পাবলিক হেল্থ ক্রাইসিস’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিং এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ এবং দূষণকারী উপাদানগুলি তদন্ত করার জন্য সৈকতে পাওয়া বা উৎপাদনের সময় হারিয়ে যাওয়া প্লাস্টিক প্যালেট এবং ক্রয় করা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক প্যালেট চিহ্নিত করেছে।
এছাড়াও ভার্চ্যুয়ালি সেমিনারে প্লাস্টিক থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গমন সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশবাদী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞরা একটি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
এই গবেষণার অংশ হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে এবং বাজারের পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে প্যালেট স্যাম্পলিং করেছে।
গবেষণায় প্যালেটে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এবং দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে যা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে যেমন ক্যান্সার বা হরমোনাল সমস্যা (যা এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন নামে পরিচিত), প্রজনন সমস্যা এবং মস্তিষ্কের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ইত্যাদি। এছাড়াও এসব রাসায়নিক পদার্থগুলোর আরো নানাভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং পরিবেশে অনেক দিন বিদ্যমান থাকে।
গবেষণাটি মোট ১৮টি যৌগের উপর করা হয়েছিল যার মধ্যে ১১টি ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটাডেন্ট, ৬টি ইউভি-স্ট্যাবিলাইজার এবং বিসফেনল এ। ১৮টি পদার্থের মধ্যে ১২টি পদার্থেই এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন ক্যামিকেলসর উপস্থিত পাওয়া গিয়েছে।
যখন পেলেটগুলিতে ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটাডেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে, তখন এর অর্থ হল যে ই-বর্জ্য থেকে পাওয়া পলিমারগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। যখন পেলেটগুলি বিসফেনল এ অন্তর্ভুক্ত করে, তখন এর অর্থ হল পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় পলিকার্বোনেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে ।
এসডো- এর গবেষণা ও বাংলাদেশের ফলাফল
পরিক্ষীত ৩ ধরনের রাসায়নিক পদার্থগুলো প্যালেটগুলোতে পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চারটি যৌগ ছিল: একটি ফ্লেম রিটাডেন্ট, দুটি ইউভি স্টেবিলাইজার এবং বিসফেনল-এ। এই নমুনাগুলিতে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপশন ক্যামিকেলের উপস্থিত পাওয়া গিয়েছে। রাসায়নিক দূষণের কারণে এই প্যালেটগুলি নতুন পণ্যগুলিতে ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত।
এসডো’র সেক্রেটারি জেনারেল এবং বিচ প্যালেট গবেষণার অন্যতম লেখক ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন: এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্লাষ্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলোর উপর নজর দেওয়া আবশ্যক।
তিনি বিভিন্ন রাসায়নিকের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, ব্রোমিনেটেড ফ্লেম রিটার্ডেন্টস (বিপিএ) সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা টিস্যুতে জমা হয়, ক্যান্সার সৃষ্টি করে, হরমোনাল পরিবর্তন ঘটায়, প্রজনন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে এবং প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে মানসিক ব্যাধি সৃষ্টি করে।
এছাড়াও তিনি শিশুদের খেলনাগুলোতে উপস্থিত এন্ডোক্রাইন-ডিসরাপ্টিং কেমিক্যালস এবং এ দ্বারা তৈরী সমস্যাগুলোর উপর জোর দিয়েছেন, সেইসাথে কীভাবে তা বাচ্চাদের মধ্যে স্নায়ু আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করে তা ব্যাখা করেছেন।
অন্যদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিকের ওপর আলোচনা করতে জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদে মিলিত হবে, যা মূলত বর্জ্য এবং সামুদ্রিক বর্জ্যের ওপর জোর দিবে।