প্লাস্টিকের গৃহস্থালীর পণ্যের উপর (থালা, বাসন, জগ, মগ, বাটি, গ্লাস, গামলা, বালতি, ঝুড়ি, বদনা, ময়লার ঝুড়ি ইত্যাদি) মূসক বা ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
রোববার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দেয়া প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
এতে সংগঠনটির সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিতকরণ, নতুন শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সরকারের ভিশন ২০২১ ও ২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের লক্ষ্য- প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছেন-এটা সরকারের অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তবে এসব লক্ষ্যপূরণ ও সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারকে তহবিলের জোগান বাড়াতে অর্থের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, অপচয় ও অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য হতে রি-সাইক্লিং করে প্লাস্টিক দানা উৎপাদন পরিবেশবান্ধব, এর মূসক অব্যাহতি দেয়ায় সরকারকে অভিনন্দন। একইসঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারিতে নিম্ন আয়ের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য্য প্লাস্টিকের থালা বাসন, জগ, মগ, বাটি, গ্লাস, সবজি ধোয়ার ব্যবহার্য্য জালি, গামলা, বালতি, খাবার ঢাকার ঢাকনি, ঝুড়ি, বদনা, সাবান দানি, মশলার ট্রে, পিঁড়ি বা টুল, ময়লার ঝুড়ি, হাতপাখা হতে মূসক বা ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়নি। ভ্যাট দিয়ে বর্তমানে এ সমস্ত পণ্য অতি দরিদ্র তৃণমূলের মানুষ ক্রয় করতে পারবেন না। কাজেই টিফিন ক্যারিয়ার ও পানির বোতলের ন্যায় উল্লিখিত পণ্য হতে মূসক অব্যাহতির জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মূসক আইনের ধারা ২(৪৮) এবং ১০(১) এ মূসক অব্যাহতির বিধান চালু থাকা এবং টার্নওভার করের সুবিধা বহাল রাখায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এনবিআরের সাধারণ আদেশ ১৭/মূসক/২০১৯ তাং ১৭/০৭/১৯ইং এর মাধ্যমে প্লাস্টিক সেক্টরের সব উৎপাদিত পণ্যকে টার্নওভার নির্বিশেষে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত করার বিধান চালু করেছেন। ফলে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প ভ্যাট দিয়ে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না। ভ্যাট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এনবিআরের উক্ত সাধারণ আদেশ বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা ও তাদের বেতন ভাতা প্রদান এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করায় সরকারকে ধন্যবাদ।
তবে বাজেটে ঘোষিত প্রণোদনা ও অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতা প্রদান প্রক্রিয়া বাস্তবভিত্তিক, সহজ এবং সরল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, সমিতি, চেম্বার, এফবিসিসিআইর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমিটির তত্ত্বাবধানে অনুদান, ঋণ এবং বিনিয়োগের মঞ্জুরি এবং অন্যান্য সহায়তা অনুমোদন প্রদান করার বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা আবশ্যক, অন্যথায় ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারী খাতের উদ্যোক্তারা এই সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হবে।
বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা করার পাশাপাশি করহার কমানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীরা উপকৃত হবেন। অন্যদিকে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ, একইভাবে সর্বনিম্ন করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, করোনাকালীন যারা সময়মতো করের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের দণ্ড সুদ মাফ করা ও যারা প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের ২ হাজার টাকা কর রেয়াত দেয়া হচ্ছে। এসব শিল্প বাণিজ্য এবং ভোক্তাবান্ধব বাজেট প্রস্তাবনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হবে বড় জোর দুই লাখ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নিম্নমুখী অর্থনৈতিক পরিবেশে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হয়নি বলে মনে হয়। এতে উৎপাদন খাতসহ সাধারণ ভোক্তাদেরকে অতিরিক্ত পরোক্ষ করভার বহন করতে হবে। বাজেটে শুল্ক ও কর বিষয়ে জন প্রত্যাশা অনুযায়ী আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে বাজেট আরও কল্যাণকর হবে বলে আমরা মনে করছি।’
বিপিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনার (ডুয়িং বিজনেস) জটিলতা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে এনবিআর অটোমেশনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, তা পুরোপুরি দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। গার্মেন্টস খাতের জন্য আর্টিফিশিয়াল বা ম্যান মেইড ফাইবার, গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অটোমেশন, রোবোটিকস ডিজাইনসহ এ ধরনের যন্ত্রাংশ উৎপাদন, ন্যানো টেকনোলজিভিত্তিক উৎপাদন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন ইত্যাদি ৭টি খাতে বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াতে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
এসব খাতে বিনিয়োগ করলে আগামী ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রথম দুই বছর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী বছরগুলোতে হ্রাসকৃত হারে কর দেয়ার সুযোগ থাকবে। এই শিল্পবান্ধব সুযোগ দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে অষ্টম খাত হিসেবে অত্যন্ত ভোক্তাবান্ধব এবং অপার সম্ভাবনাময় প্লাস্টিক খাতকে কর অবকাশ সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করার বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।