বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র। বর্তমানে এই অঙ্গনের ‘প্রাণ ভোমরা’ দেশের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান। মন্দার বাজারেও তিনি উপহার দিচ্ছেন একের পর এক চলচ্চিত্র। যার উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঢালিউড! ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করতে তিনি নিজে প্রযোজনাও করছেন।
মাঝখানে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোতে শাকিবের অভিনয়কে সিনেবিশ্লেষকরা বলেছিলেন ‘টার্নিং পয়েন্ট’! লুকে পরিবর্তন, অভিনয় দক্ষতা, চিত্রনাট্য বাছাই সব মিলিয়ে অন্য অবতারে পাওয়া গিয়েছিলো শাকিবকে! কিন্তু এরপরেও বেশকিছু গড়পড়তা কাজেই দেখা গেছে তাকে। সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত একাধিক ছবিতে সেই পুরনো চেহেরার শাকিব খানেরই দেখা মিললো! এমনটাই কি তবে নিয়মিত চলবে?
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীর্ঘ সময় এসব বিষয় নিয়েই দেশের এই তারকা অভিনেতা ও প্রযোজকের সঙ্গে গল্পে গল্পে সময় কাটলো। তার কথায় একটা বিষয় পরিস্কার, এবার বোধহয় তিনি প্রচলিত ধারার বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন। ঘুরে ফিরেই শাকিব খান বলছিলেন, ‘অনেক হয়েছে আর না!’ বিস্তারিত পড়ুন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে তার কথোপকথনে:
নিজেকে নিয়ে নতুন কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
কোয়ালিটি নেই এমন কাজ আর করবোই না। প্রয়োজনে বসে থাকবো, নিজেকে সময় দেব। তবুও মানহীন কাজ আর করবো না। দেশে-বিদেশে লক্ষ-কোটি মানুষ আমাকে এবং আমার কাজকে ভালোবাসেন, সম্মান করেন। এবার দুবাই গিয়েও টের পেলাম সেটা। এও বুঝলাম, তারা আমার কাছ থেকে ভালো কাজ চায়। তাদের জন্য হলেও কাজের ক্ষেত্রে আর কম্প্রোমাইজ করবো না। ইন্ডাস্ট্রির গুটি কয়েক মানুষকে খুশী করতে গিয়ে লক্ষ-কোটি মানুষকে নিরাশ করবো না। কোটি মানুষের চাওয়া আমার কাছে বড়। সত্যিই বলছি, অনেক হয়েছে আর না!
এই উপলব্ধি হতে একটু দেরি হয়ে গেল না?
কোরবানির ঈদের পর থেকে এটা আমার সিরিয়াস উপলব্ধি। আমি আমার কাজ নিয়েই থাকবো। আমি বুঝে গেছি, একা একা এই সেক্টরটাকে চেঞ্জ করতে পারবো না। আর এটা একার পক্ষে সম্ভবও না। এখন থেকে আমি আমার কাজটাকেই ডেভেলপ করবো। সেটাই বেটার হবে। সবাইকে পরিবর্তন করার চেষ্টাটা বোকামি। যে চেষ্টা গত একবছরে ধরে করেছি। এখন থেকে সময় উপযোগী যেসব কাজ হবে সেগুলোকে শতভাগ ফোকাস করবো। সংখ্যা কোনো ব্যাপার না, ভালো কাজ করবো। দরকার পড়লে বছরে একটা-কিংবা দু’টো কাজ করবো।
ক’দিন আগে দুবাই গেলেন, কেন?
খুব সম্মান পেয়েছি সেখানে। সেখানকার বিলাসবহুল র্যাডিসন ব্লুতে আমি যাওয়ার দু’দিন আগে থেকে ডিজিটাল ব্যানার করেছিল, আমার আগমন উপলক্ষে। মূলত, দু’টো ছবি করবো দুবাই এবং লন্ডন মিলিয়ে। জয়েন্ট এবং আমার প্রযোজনায় দুটো ছবি দুইভাবে হবে। এরজন্য দুবাইতে রেকি করতে গিয়েছিলাম। কারণ, সেখানে আগে শুটিং করিনি। লন্ডনে আগে শুটিং করেছি। হয়তো শুটিংয়ের ৭দিন আগে রেকিটা গুছিয়ে নিতে হবে। প্রি-প্রডাকশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। লেটস সি…!
নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন। নতুন কাজের জন্য পুরাতন কাজ শেষ করে দিচ্ছেন?
পুরাতন কোনো কাজ নেই হাতে। ‘একটু প্রেম দরকার’-এর ডাবিং বাকি ছিল। দু’দিনে শেষ করে দিয়েছি। এখন ‘আগুন’-এর কাজ করছি। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত একটানা কাজ করে শেষ করে দেব। এরপর থেকে শুধুই নিজের জন্য ভাববো।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
পরিচালক নির্বাচনে আপনার আরও চুজি হওয়া উচিত না?
সমস্ত কিছুতে আমি সিরিয়াসলি কাজ করবো। পুরনো ধ্যান ধারণা সব বাদ। মানে একেবারে ডিলিট। বললামই তো, দু’চারজন মানুষের সমস্যা সমাধান করার চাইতে আমার কাছে কোটি মানুষের চাওয়াটা বড়। এতে করে ইন্ডাস্ট্রির দু’চারজন মানুষ যদি আমার উপর অখুশী হয় তাতে আমার কিছুই আসবে যাবে না।ফিটনেসের দিকে নজর দিচ্ছেন?
আমি নিজেও চাই ফিটনেস সচেতন হতে। কিন্তু একজন মানুষ যদি এতোদিকে নজর দিতে যায়, তাহলে হবে কীভাবে! রোযার ঈদ, কোরবানির ঈদের ছবি দেয়ার জন্য খুব তাড়াহুড়ো গেছে। নিজেরই ক্ষতি করেছি। সবমিলিয়ে পুরো বছরটাই মাটি হয়ে গেল। আগামীতে এই ভুল আর হবে না।
আপনার কাজগুলো এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে হয় কেন?
‘পাসওয়ার্ড’ রোযার ঈদে মুক্তির পরেই কোরবানির ঈদের ছবির জন্য দিনরাত এক করে কাজ করলাম। এতো নাকে মুখে করে ভালো কাজ করা মুশকিল। একটা বিষয় ভেবে কাজ করছিলাম, অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু হলো না। এতো এতো সমস্যা আমার একার পক্ষে সমাধান সম্ভব না। এখন থেকে ধীরে সুস্থে করবো। আমার ফ্যানদের জন্যই কাজ করবো।
প্রেক্ষাগৃহে মেশিন দিয়ে ফিডব্যাক কেমন পেলেন?
রোযার ঈদে আমি আট হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু আমি মেশিন বসানোর পর সেই টাকার অঙ্ক অনেক কমে গেছে। যে অ্যামাউন্ট দিতে হচ্ছে সেটা প্রযোজকের গায়েই লাগে না। ছয়হাজার হয়েছে দুইহাজার, আটহাজার হয়ে গেছে চারহাজার টাকা। এতে প্রযোজকদের খুব উপকার হচ্ছে।
‘সালমান শাহ জন্মোৎসব’ হচ্ছে সাত দিনব্যাপী। জীবদ্দশায় আপনার ছবি নিয়েও ২০০৮ সালে উৎসব হয়েছিল। মনে আছে?
হাহাহা… আমার পুরোটা মনে না থাকলেও এতোটুকু খেয়ালে আসছে অনেকগুলো সিনেমা হলে আমার ছবি দিয়ে উৎসব হয়েছিল এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে শিল্পী সমিতির ফান্ডে দেয়া হয়েছিল। আর সালমান শাহ, তিনি ছিলেন তার সময়ের সুপারস্টার। সিনেমা হলে তার অনেক ছবি দেখেছি। যেকোনো চরিত্রেই মানিয়ে যেতেন। একজন অভিনেতার এটাই বড় গুণ। মৃত্যুর এতোগুলো বছর পরও তার জনপ্রিয়তা চুল পরিমাণ কমেনি। তিনি এখনো কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে আছেন। এটাই একজন শিল্পীর পরম পাওয়া।